অতিবর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। প্রবল স্রোতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নদীগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এছাড়া সম্প্রতি দুই দফায় ভারতের গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউসেক পানি ছেড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। এসব ঘটনায় পানিবন্দি হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ৷
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বন্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও। এমন অন্তত ছয়টি ছবি-ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যেগুলো উত্তরবঙ্গের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হলেও আদতে এগুলো ওই এলাকাগুলোর বর্তমান সময়েরই নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানানো হয়।
ঘটনাগুলো প্রসঙ্গে রিউমর স্ক্যানার বলছে, ফেসবুকে বর্তমানে লালমনিরহাটের অবস্থা বলে দাবি করে একটি এলাকার এরিয়াল ভিউ সম্বলিত একটি ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। কিছু গণমাধ্যমেও একই ছবি প্রচার হচ্ছে। এমনকি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও ছবিটি একই দাবিতে প্রচার করছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাংলাদেশেরই নয়। গত ২৮ জুলাই তোলা ছবিটিতে সে সময়ে উত্তর কোরিয়ার বন্যার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
অন্য একটি ঘটনা ফ্যাক্টচেক করে রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, বন্যায় উত্তরাঞ্চলে বাড়িঘর পানির নিচে চলে গেছে, দেখা যাচ্ছে শুধু টিনের ছাদ – এমন একটি ছবি প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে ছবিটি ২০২২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। সে বছরের জুনে কুড়িগ্রামের বন্যার সংবাদে গণমাধ্যমে ছবিটি প্রচার করা হয়।এছাড়া কোমর সমান পানিতে এক নারী একটি শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এমন একটি ছবিকেও লালমনিরহাটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে, যা সত্য নয়। ছবিটি এই বছরের, তবে গত জুলাইয়ে কুড়িগ্রাম থেকে তোলা।
রিউমর স্ক্যানার বলছে, শুধু ছবিই নয়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরনো ও ভিন্ন দেশের ভিডিও প্রচার হচ্ছে৷ লালমনিরহাটের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি দাবি করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, সেতু সদৃশ একটি স্থাপনার পাশে পানির তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে৷ তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এই দৃশ্য নেপালের। দেশটির সাপ্তাকোসি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় কোশি বাঁধের সবকটি স্লুইস গেট সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়।
এছাড়া, গত আগস্টে পূর্বাঞ্চলের একাধিক জেলায় হওয়া বন্যার সময়ে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের দৃশ্য দাবিতে ফের বেশ ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্ট চেকাররা বলছেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো সংকটময় পরিস্থিতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘনঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা নদীভাঙনের ভয়াবহতা এদেশের মানুষের কাছে এখন চেনা দুর্যোগ। এসব পরিস্থিতিতে জানমাল রক্ষা এবং ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের ভিড়ে গুজবের প্রচার এবং প্রসার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক বিষয়গুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গুজবের এই ভয়াবহতা রোধে দল--মত নির্বিশেষ সচেতন সকল মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।