‘আমার পুত (ছেলে) রাইতে (রাতে) ভাত খাইয়্যা গেছে ডিউটি করতে। এই খাওয়াই যে বাবার শেষ খাওয়া আমি জানতাম না গো। জানলে আমি বাবারে যাইতে দিতাম না। যারা আমার বাবারে মারছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
এভাবেই বিলাপ করছিলেন দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. আরমান মিয়ার (২৪) মা শামছুন্নাহার ঝর্ণা।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ডিউটিরত আরমানকে কুপিয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কাজ করতেন তিনি। আরমানের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আরমান ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো সোমবার দিবাগত রাতেও স্কুল ক্যাম্পাসে তিনি ডিউটিরত ছিলেন। আরমান মিয়া জাটিয়া গ্রামের মৃত লোকমান হেকিমের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, সকাল ৭টার দিকে স্কুলের ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পরে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, তার রক্তমাখা শরীর শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পরে বাড়িতে খবর দিলে চাচি ফাতেমা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরমানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আরমান খুবই ভালো ছেলে ছিল। আরমানকে যারা মেরেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আরমানের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে মহান আল্লাহ যেন এই শোক সইবার শক্তি দেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আটক করতে সক্ষম হব।