মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পরিবর্ত, হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, মন্দির ভাংচুরসহ নানা সমস্যার মধ্যে এবছর পূজা হবে কি না এমন শঙ্কায় ছিল হিন্দু ধর্মালম্বিরা।
সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে উৎসবকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। পুজার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তাই চলছে শেষ মুহুর্তের রং তুলির কাজ। দেবী দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিককে আকৃতি দিতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মৃৎ শিল্পীরা। দম ফেলারও যেন সময়টুকু নেই তাদের।
পিরোজপুরের বিভিন্ন মন্দির ও পালপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ আবার কাদা দিয়ে প্রতিমার আকৃতি তৈরি করছেন। বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রতিমাতে কাদামাটি লাগানোর কাজ শেষ। এখন চলছে প্রতিমাতে রংতুলির ছোঁয়া ও সাজসজ্জার কাজ।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, এবছর পূজা হবে কি না এমন শঙ্কায় ছিলেন অনেকেই। তাই বিগত বছরের তুলনায় প্রতিমার চাহিদা কমেছে, অর্ধেকে নেমে এসেছে প্রতিমার অর্ডার। বড় মণ্ডপের চেয়ে ছোট মণ্ডপের কাজ হচ্ছে বেশি। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছে না প্রতিমা শিল্পীরা। এছাড়া প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখা নিয়েও চিন্তিত তারা।
শিল্পীদের সঙ্গে তাদের সহযোগীরাও পূজার এই মৌসুমে বাড়তি টাকা আয় করেন প্রতিমার কাজ করে। এবার ভাটা পড়েছে তাদের আয়ের উৎসতেও।
পিরোজপুরের পালপাড়া এলাকার প্রতিমা কারখানার মালিক পরিমল পাল বলেন, এবছর ৩৫ থেকে ৪০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিমা তৈরির মাটি, রংসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। ক্রেতাদের বাজেটও কম হওয়ায় এবছর আমাদের খরচ বেশি হলেও আয় কম। অনেকে ধারণা করেছিল পূজা হবে না। কিন্তু এখন পূজা হচ্ছে। তাই কাজের চাপও বেশি।
প্রতিমা শিল্পী ঝুমুর পাল বলেন, আমাদের কারখানায় প্রথম যখন কাজ শুরু করি তখন দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। পরে কাজ বন্ধ রাখি। দেশ স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু করি। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক কম প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিমা তৈরিতে গত বছরের তুলনায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে তবে সেই দামে বিক্রি করতে পারছি না।
শ্রমিক সুব্রত পাল বলেন, আমাদের একটি প্রতিমা তৈরি করতে নাড়া, কুটা, খর, বাঁশ, চটা, মাটি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হয়। একটি প্রতিমা তৈরি করতে তিন মাস সময় লাগে এরপর রঙের কাজ থাকে। তাতে আমরা সঠিক পারিশ্রমিক পাই না। আমাদের দৈনিক ১ হাজার টাকা পারিশ্রমিক প্রয়োজন।
প্রতিমা ক্রেতা শ্যামল চন্দ্র বড়াল বলেন, ভাণ্ডারিয়া থেকে প্রতিমা কিনতে এসেছি। তবে প্রতিমার অনেক দাম। দেখছি দাম-দরে পছন্দ হলে নিয়ে নেব।
প্রতিমা তৈরির কারিগর জয়দেব পাল বলেন, আগে পরিস্থিতি খারাপ থাকায় প্রতিমা কম বানিয়েছিলাম। এখন সীমিত সময় থাকায় খুব ব্যস্ততার মধ্যে দিন পার করছি আমরা। রাতের ৩-৪টা পর্যন্ত কাজ করি। সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে প্রতিমা তৈরি করে দিতে হবে। তারপরে আবার মাল জিনিসের খুব দাম। সব মিলিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়ে যায়।
পিরোজপুর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি জোতির্ময় হালদার বাবুল বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরি নিয়ে শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আনন্দঘন পরিবেশে এ পূজা উদযাপিত হবে।