মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
খানাখন্দে ভরা সড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪, ২:৫২ PM
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে অন্যতম কেন্দুয়া-নেত্রকোনা জেলা সড়ক থেকে ভায়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের রামপুর বাজার থেকে গোপালপুর বাজার হয়ে পাশ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী বাজার পর্যন্ত সড়ক। 

এসড়কটি কেন্দুয়ার অংশে ৯কি.মি.অংশজুড়ে বেহালদশা পাশাপাশি পাশ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলার অংশে আনুমানিক ১০কি.মি. সড়কের অধিকাংশই খানাখন্দ আর বড় গর্তে ভরা। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারী, যাত্রীসাধারণসহ পরিবহন চালকদের। 

সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। কোথাও কোথাও আড়াই ইঞ্চি থেকে সাত ইঞ্চি পর্যন্ত গর্ত। বেশ কিছু জায়গায় উঠে গেছে পিচ ও কার্পেট। বৃষ্টি হলেই এসব জায়গায় পানি জমে। যানবাহন উল্টে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে দুর্ঘটনা। হতাহত হয় মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থী,স্থানীয় এলাকাবাসী, পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রামপুর থেকে গোপালপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৯কি.মি.একমাত্র সড়ক হওয়ায় বলাইশিমুল, দলপা, আশুজিয়া ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা সদর উপজেলা এবং আটপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের চলাচলের অবলম্বন এসড়ক। এই সড়ক দিয়ে গোপালপুর মডেল কলেজ,গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়, আশুজিয়া জি কে ইন্সটিটিউট, বালিগঞ্জ বাজার, রাজিবপুর বাজারসহ বেশ কিছুমাদ্রাসা ও  অসংখ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার লোকজনকে চলাচল করতে হয়। 

একমাত্র সড়ক হওয়ায় ট্রাক, ট্রাক্টর, অটোভ্যান, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস প্রতিনিয়ত চলাচল করলেও অনেক যানবাহন ইতোমধ্যেই কমে গেছে। ফলে যানবাহনের উপর নির্ভরশীল কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। 

রাস্তাটি সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম হওয়ায় বর্তমানে কোথাও কোথাও পাকা সড়কের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়না। রামপুর-গোপালপুর প্রায় ৯কি.মি. সড়কজুড়ে কার্পেটিং উঠে ভেঙে গিয়ে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একেকটা গর্ত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা খানা-খন্দে পানিতে ভরে যায়। কাঁদামাটি-পানি অতিক্রম করে যানবাহন চলাচল করতে হয়। প্রায় লাখো মানুষ নানান প্রতিকুলতা আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে এসড়কে।

দেখা যায়, দু’পাশ ধসে পিচ ও পাথরের কুচি সরে যাওয়ায় দুই উপজেলার মানুষ চরম বিপাকে আছে। এসড়কে যেখানে প্রায় ৬-৭ ইঞ্চি পরিমাণ খানাখন্দ, বড় ফাটল দেখা যায়। সড়কের দু’পাশে কিছু জায়গা ধসে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সেখানে কিছু বাঁশের খুঁটিতে লাল রঙের কাপড় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, কেন্দুয়া-নেত্রকোনা জেলা সড়কের ভায়া সড়ক রামপুর বাজার থেকে বলাইশিমুল ইউনিয়নের গোপালপুর বাজার হয়ে পাশ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলা তেলিগাতি বাজার পর্যন্ত যাতায়াতের প্রধান এসড়ক এখন যেন মরণফাঁদ। ২০কি.মি. দীর্ঘ এসড়ক সংস্কার এখন মানুষের প্রাণের দাবী। পুলিশ বলছে, এই সড়কে বেহাল দশার কারণে সাধারণ থেকে সবধরনের মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে এসড়কে মাঝে মাঝে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা থেকে এখানে হতাহতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। 

স্থানীয় এলাকাবাসী আরো জানায়, এসড়কে বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন খুবই ধীরে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করছে । এই রাস্তা প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভাঙতেছে। এই ভাঙ্গা সড়কে খুব কষ্ট করে বড় থেকে ছোট সব ধরনের গাড়ি চলাচল করে।  প্রায়ই মাহিন্দ্রগাড়ি নষ্ট হয়।’

বলাইশিমুল গ্রামের কৃষক রহিম আহমেদ জানান, সড়কটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার করা হয়। তাই বৃষ্টি হলেই পানির তোড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে কৃষিপণ্য গ্রাম থেকে শহরে নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অটোরিকশা ও ট্রাকচালকরা বলেন, এসড়কে চলার অবস্থা নেই। খানাখন্দে পড়ে অটোরিকশা উল্টে যায়। রাস্তার মাঝেই গাড়ি নষ্ট হয়। সড়কের বড় বড় আধলা ইটগুলো ট্রাকের চাকায় ঢুকে যায়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যায় না। গতকাল অটোরিকশার এক যাত্রী রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। 

রামপুর থেকে গোপালপুর বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করেছে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় এলাকাবাসী সরেজমিনে  এরকম চিত্র ফুটে উঠেছে। 

রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা তফাজ্জল তালুকদার বলেন, রামপুর-গোপালপুর সড়কের বেহাল অবস্থা, একদিন গোপালপুর বাড়ীতে গেলে শরীরে ব্যথার অনুভব হয়, পরক্ষণেই ব্যথানাশক ঔষধ খেতে হয়। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জোর দাবী জানান এলাকাবাসী। 

গোপালপুরের শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রামপুর-গোপালপুর সড়কটি এতই খারাপ যে, শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে যেতে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে রোগী কিংবা গর্ভবতী মহিলাদেরকে নিয়ে জেলা সদরে যেতে হলে জনগনকে গোপালপুর-রামপুর সড়কে না গিয়ে ৫-৭ কিলোমিটার ঘুরে অন্য সড়কে যেতে হয়। আবার বৃষ্টি হলে বড় বড় গর্তে পানি জমে সড়ক সাগরে পরিণত হয়। মানুষের খুবই দুর্ভোগ হয়। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান। 

এপ্রসঙ্গে কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সরকার বলেন,এসড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কটি আটপাড়া উপজেলা থেকে কেন্দুয়া গোপালপুর- রামপুর হয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। আটপাড়া উপজেলা থেকে রামপুরা-গোপালপুর হয়ে গৌরীপুর উপজেলা পর্যন্ত সড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে নেত্রকোনা  এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ঢাকায় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।অনুমোদন পেলেই দ্রুত রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত