সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
শেখ হাসিনার পতনের পর উল্লেখযোগ্য কিছু হত্যাকাণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ৮:২২ PM
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে যশোরে মাথায় গুলি করে মেহের আলী (৪৫) নামের এক প্রবাসীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মেহের আলী ওই এলাকার আব্দুল মালেক মণ্ডলের ছেলে। তিনি সম্প্রতি কুয়েত থেকে দেশে ফেরেন। তিনি স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। স্বজনদের দাবি, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক কোন্দলে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। 

এর পরপরই গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বাঁশবাড়ি গ্রামে চোর সন্দেহে মো. ইসরাফিল নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবার হবিগঞ্জের বাহুবলে ধানক্ষেত থেকে মাসুক মিয়া (৩২) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময়ে পিরোজপুরে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। 

আর গত ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকায়  ছুরিকাঘাতে মো. জিন্নাহ (৬০) নামের ব্যাটারিচালিত এক রিকশাচালককে হত্যা করা হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মুনতাকিম আলিফ (২৭) নামের এক যুবক নিহত হন।

একই দিন (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে নেশার টাকা না দেওয়ায় মশিউর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তি আপন ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন। ২৩ সেপ্টেম্বর বাসায় চুরি করতে গিয়ে দুই চোর নটর ডেম কলেজের অফিস সহকারী লিপিকা গোমেজকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

এ ছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেন নামের এক যুবককে চোখ বেঁধে গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে বিরোধে বগুড়ায় খুন হন দুজন। ৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের নাগরপুরে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ও তাঁর ভাতিজাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে খুনের অভিযোগে এক যুবককে আটক করে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। এতে তাঁরও মৃত্যু হয়। আবার গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরে গরু চোর সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে।

এইচআর এসএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআর এসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে দুই মাসের  মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম।

এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনীতে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, হামলা, শ্রমিক হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নির্যাতন ও হত্যা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেশি ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে নরসিংদীর পলাশে ও ঢাকার কারওয়ান বাজারে শিক্ষার্থী ও বিএনপির বাজার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রিক সহিংসতায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।

সেপ্টেম্বর মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বা হেফাজতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে দুজন পাহাড়ি নাগরিক নিহত হন। এ ছাড়া আশুলিয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বর পোশাক শ্রমিক কাউসার হোসেন খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ মাসে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মধ্যে নির্যাতনে চারজন নিহত হন।

অন্যদিকে গত ২৫ আগস্ট ছাত্রদের সঙ্গে আনসার বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে আহত গাড়িচালক শাহীন হাওলাদার (৪০) ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হেফাজতে সৈয়দ নুরুল করিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। 

এ মাসে অন্তত ১৮টি ঘটনায় ৯০ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন দুজন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন তিনজন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন। এ ছাড়া পাঁচটি মামলায় ৬২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

এ মাসে বড় উদ্বেগের বিষয় ‘গণপিটুনির’ ৩৬টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে রাজশাহীতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সামনে তোফাজ্জল হোসেন নামের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ছাড়া ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাজারে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০ জন।

সেপ্টেম্বর মাসে ১১০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ১৫ জন ১৮ বছরের কম বয়সী।

এইচআরএসএসের আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসে কমপক্ষে ৫৪১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে কমপক্ষে ৪৯টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৫৩৭ জন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত