বিনোদন অঙ্গনে দাফিয়ে বেড়ানো বেশীরভাগ তারকা কেনো আড়ালে চলে গেলেন? কেন এখন শোবিজের সব শাখায় সুনসান নীরবতা কাজ করছে? মূল কারণটা প্রকাশ্যে বলছে না কেউই।
বেশীদুর আলোচনার প্রয়োজন নেই, বিএফডিসি কেন্দ্রীক যারা প্রতাপশালী ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজদের পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভবে আসলো কেন? জায়েদ খান কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরছে না, প্রভাবশালী নিপুণ আক্তার কেন নিরুদ্দেশ ? অপু বিশ্বাস কয়েক বছর নিজের প্রোপাইলে শেখ হাসিনার ছবি দেখিয়ে রেখে হঠাৎ ৫ আগষ্টের পর তড়িঘড়ি করে সরিয়ে দিয়েছেন। বোঝা যায়, নিজের ভেতর কোন কারণে এরা থরথর করে কেঁপে উঠেছেন এবং অজানা কোন ভয়ে তারা লুকিয়ে পড়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ফ্যাসিস্টরা গণমাধ্যম এবং শিল্পীদের ব্যবহার করে যা জনপ্রিয় করে তোলেন, সাধারণ জনগন তাই বিশ্বাস করেন। গণমাধ্যম ও শিল্পীদের উপর ভর করে ফ্যাসিবাদ খুব দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই শিল্পীরা সেই কাজটিই করেছেন এবং তাদের সহযোগি ছিলেন গণমাধ্যমের কিছু বিনোদন সাংবাদিক। যদিও শিল্পীদের মতো করে ফ্যাসিবাদের দোসর বিনোদন বিটের সেই সব সাংবাদিকদের এখনো পালাতে হয়নি। তারা ভোট করছেন, পার্টি করছেন। খানিক আড়ালে থাকা নায়িকাদের সঙ্গ দিচ্ছেন। এছাড়া বিনোদন সাংবাদিকদের কেউ কেউ বিএনপি কার্যালয় এবং জাসাস নেতাদের সাখে সখ্যতা গড়ে তুলতে ফন্দি আঁটছেন।
বিগত পনেরো বছর আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করেছে গণমাধ্যম ও শিল্পীসমাজের বৃহৎ অংশ। গণমাধ্যম পরিণত হয়েছে মাফিয়া মাধ্যমে। প্রতিবাদীরা সেখানে নানাভাবে পিষ্ট হয়েছেন। শিল্পীরা লিখে, গান গেয়ে, অভিনয় করে, সিনেমা, নানারকম মূর্তি বানিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সবার হাতে অর্থ তুলে দিয়ে, সবাইকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে সরকার তার ভিত্তি মজবুত করেছে।
বিকৃত ইতিহাসনির্ভর বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করে, নাটক বা সিনেমা বানিয়ে অনেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা, সিনেমায় অভিনয় করে শিল্পীরা পেয়েছেন বিনামূল্যে প্লট। অনেকের মতে, ধীরে ধীরে এরা তারকা থেকে তারকাটা হয়ে মানুষের মনে আঘাত দিয়েছেন। ফলে জনরোষের ভয়ে তারা এখন পালিয়ে গেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে অনেক তারকা মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন।
শোবিজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা অন্তত ২৭ জন নারী গত নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন লাকী ইনাম, সুজাতা বেগম, সুবর্ণা মুস্তাফা, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, শিমলা, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, মেহের আফরোজ শাওন, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর ও নুসরাত ফারিয়ার মতো শোবিজ তারকারা।
এছাড়া কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, চয়ন ইসলাম, আজিজুল হাকিম, ফেরদৌস আহমেদ, জায়েদ খান, হারুনুর রশিদ, আহসানুল হক মিনু, সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম এবং শুভ্র দেব। রাজনীতি না করে কী কারনে তারা এমপি হতে চেয়েছেন? প্রকাশ্যে এসে তারা বিষয়টিও খোলাসা করে দিতে হবে। তারপর জনগণই তাদের বিষয় সিদ্ধান্ত নিবেন।
এসব বিষয়ে চিত্রনায়ক ওমর সানি সম্প্রতি বলেছেন, ‘পালিয়ে থাকা শিল্পীদের কাজ হতে পারে না। হয়তো কিছুদিন জেলে থাকতে হবে বা রিমান্ডে থাকতে হবে। যারা পালিয়ে আছে তারা প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চাইলেই পারে’।
কথাটা স্বীকার করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকার পতন হওয়ার পর অনেক প্রযোজক আড়ালে চলে গেছেন। তবে আশা করছি, খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, এই অবস্থা চলতে থাকলে চলচ্চিত্র পেশায় কাউকে পাওয়া যাবে না।’