কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সেবায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। যার ফলে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছে উখিয়াবাসী। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পাহাড় ও বালু খেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমেদ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, 'বালুখালী মরাগাছতলা এলাকায় সরকারি খাসজমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। গত ৬ অক্টোবর "উখিয়ায় সরকারি খাসজমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদ প্রকাশের পরের দিন ৭ অক্টোবর দুপুরে মরাগাছতলা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বনবি- ভাগের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৩০ একর খাসজমি জবরদখলমুক্ত করা হয়। অভিযানে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। একইদিন দুপুরে বালুখালীতে অভিযান পরিচালনা করে ইজারা বহির্ভূত বালি উত্তোলন করার সময় বালিভর্তি ডাম্পার জব্দ করেছে। জব্দকৃত বালু ও গাড়ী ছাড়াতে তদবির করা সিন্ডিকেট সুবিধা করতে না পেরে উল্টো এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
এতদিন ধরে এই ভূমি অফিস নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে আক্ষেপ ছিল তা এখন অনেকটাই গুটিয়েছে। শুধু ভূমি অফিসই নয়, বিভিন্ন অনিয়ম রোধেও সোচ্চার তিনি। অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে কৃষি জমি ধ্বংসকরণ রোধ, ভেজাল বিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন।
উখিয়া উপজেলায় যোগদানের পর প্রায় শতাধিক অভিযান পরিচালনা করেছেন সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমেদ৷
সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, উখিয়া উপজেলায় মোট ৬ টি খাল ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ২ টি খাল ব্যতিত বাকি খালগুলো ইজারা হয় নি, এর মধ্যে পালংখালী ইউনিয়নে রয়েছে ৩ টি বড়ো খাল। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় খালে প্রচুর বালি আসে। এই সুযোগে বালুখেকোরা নির্বিচারে বালি তোলার অভিযোগ আসলে গত ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ পালংখালী খালে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন, পাইপ ও বালি জব্দ করা হয়। এই বালি পরবর্তীতে নিলাম এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই বালুখেকোরা সুবিধা করতে না পেরে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয় উপজেলা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন সালেহ আহমেদ। এরপর তিনি উখিয়া উপজেলা ৩টি ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে উদ্যোগী হন। প্রতিদিনই ভূমির জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে উখিয়া ভুমি অফিসের এই দপ্তরটিতে। আবেদনের বিপরীতে ত্বরিত সেবা প্রদানে নেয়া হয় ব্যবস্থা।
সমন্বিত এই ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিতে তিনি সম্প্রতি ৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। তহসিলদারসহ সকলকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কঠোর নির্দেশ দেন। সেবা নিতে আসা কেউ যেন বঞ্চিত না হয় এবং ভোগান্তিতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন। এতে করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কাজের গতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়।
জানা যায়, নামজারি ও জমা খারিজ সংক্রান্ত বিষয় ৭-৮ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এছাড়া ই-নামজারি, খতিয়ান সংশোধন, দেওয়ানী আদালতের রায় ও আদেশমূলে রেকর্ড সংশোধন, অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান, হাট-বাজারের চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত প্রদান, অর্পিত সম্পত্তির লীজ প্রদান ও নবায়ন ও ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দ্রুত সময়ে প্রদান এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার ভূমি সালেহ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সাধারণ মানুষ দ্রুত সেবা পেয়ে খুশি। দেশের মানুষের, সরকারের ও ভূমি কার্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এমন কাজে কোনো আপোষ করব না। এছাড়াও পাহাড় ও বালু খেকো দুর্বৃত্তদের কঠোর হয়েছি। যেমন ষড়যন্ত্র আসুক না কেনো দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগ করে যাবো।
বালু খেকোদের বিরুদ্ধে তিনি বলেছে, উপজেলা পর্যায়ে বাজার ইজারা দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থাৎ ইউএনওর এবং এই জন্য উপজেলা কমিটি রয়েছে। উখিয়ার বালুখালী বাজার উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজার ইজারা দেওয়া হয়নি।
স্বাভাবিকভাবেই আইন অনুযায়ী ইজারা না হলে খাস কালেকশন করতে হয়। খাস কালেকশন এর দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে। কয়েকজন লোক নিয়োগ করে খাস কালেকশন আদায় করে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা যেহেতু এত সরকারি জনবল থাকে না। নিয়োগকৃত ব্যক্তিরা দৈনিক টাকা তুলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। পরবর্তীতে এই টাকা সরকারি ফান্ড এ জমা দেওয়া হয়। এই পুরো বিষয়টি ইউএনও স্যার ও আমি তদারকি করি। কোনো সমস্যা/অনিয়ম তৈরি হলে আমরা সাথে সাথে খাস কালেকশন বন্ধ করে সমাধান করেছি। এই বিষয়গুলো হয়তো অনেকেই জানে তারপরেও যারা জানেন না তাদের জন্য বলা।