মায়ের মৃত্যুতে পরিবারের আবেদনে প্যারোলে কারাগার থেকে বের হলেও ছাত্রলীগের এক নেতার হাতকড়া নিয়ে দাফনকাজে অংশ নেওয়ার ছবি, ভিডিও ফেইসবুকে ছড়ানোর পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ গ্রামের সেই ছবি, ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- মায়ের লাশ বহনের সময়ও হাতে হাতকড়া থাকতেই হবে?
ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুবাইত আজাদ সুস্থির।
জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে আবুল হোসেন কেদারগঞ্জ গ্রামের মৃত কবির হোসেনের ছেলে। জাহাঙ্গীরের মা আলেয়া খাতুন (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান বলেন, গত ৫ আগস্ট সংঘটিত একটি ঘটনা নিয়ে করা বিস্ফোরক ও নাশকতা মামলায় জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১২ নভেম্বর থেকে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে আটক।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমান জানান, মায়ের দাফনে অংশ নেওয়ার জন্য পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে বেলা ৫টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
হাতকড়া হাতে জাহাঙ্গীরের একটি ভিডিও ফেইসবুক পেইজে শেয়ার করে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরি জিপু লিখেছেন, “হাতে মিথ্যা মামলার হাতকড়া, কাঁধে মায়ের লাশ....জাহাঙ্গীর কীভাবে তোমাকে সান্ত্বনা দেব? সে ভাষা আমার জানা নেই।”
সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, হাতে হাতকড়া এবং দড়ি বাঁধা অবস্থায় পুলিশের গাড়ি থেকে জাহাঙ্গীর নামছেন। জাহাঙ্গীর শোকে স্বজনদের বুকে আছড়ে পড়ছেন তখনো হাতে হাতকড়া। হাতকড়া হাতে নিয়েই সেরেছেন ওজু। পরে যখন কাঁধে মায়ের লাশের খাটিয়া নিয়ে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর, তখনও তার হাতে ঝুলছিল হাতকড়া।
এই লেখায় মন্তব্য করেছেন অনেকে। বশির উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন “এরকম দৃশ্য যেন কোনো দলের ভাইয়ের না আসে।”
জোয়ার্দ্দার জুয়েল নামের একজন লিখেছেন, “কখনো ভুলবো না...হাতে হাতকড়া কাঁধে মায়ের লাশ...।”
নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এর আগে আমরা দেখেছি জেলা ছাত্রলীগের নেতা হিমেলকে তার পিতার দাফনকাজের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় তখনও তার হাতে হাতকড়া ছিল। হাতকড়া হাতে নিয়েই সে তার মায়ের গলা জড়িয়ে কেঁদেছে। এসব দৃশ্য খুবই কষ্টকর। যুবলীগ নেতা বাহারুলকেও তার স্বজনের দাফনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তখনও তার হাতে হাতকড়া ছিল।”