বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জয় বাংলা’ একটি প্রতীকী স্লোগান হিসেবে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা’ পরিণত হয় প্রধান স্লোগানে। অনেক গল্প-সিনেমায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এমনকি সাধারণ মানুষের অসংখ্য বীরত্বগাথা উঠে এসেছে। তবে পরবর্তিতে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে অনেকটা জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া হয়।
ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় ‘জয় বাংলা’ কোনো সময় জাতীয় স্লোগান ছিল না। মূলত এটি ছিল আওয়ামী লীগের স্লোগান। ফলে এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ২০২২ সালে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মার্চ মাসের দুই তারিখে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে এর আগে জাতীয় স্লোগান কী ছিল। আসলে এর আগে কোনো জাতীয় স্লোগানই ছিল না।
সম্প্রতি 'জয় বাংলা'কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই দাবি করছেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়া, ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন একটি ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) দিয়ে দাবি করেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও একই দাবিতে পোস্ট করেছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে জান যায়, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়নি বরং ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে দেওয়া রায়কে স্থগিত করার বিষয়কে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ১০ ডিসেম্বর “জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের রায় স্থগিত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন করলে গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি শেষে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগ।
এর আগে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বশির আহমেদের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে রায় দেয় হাই কোর্ট।