কমলনগরে ফিল্মি স্টাইলে মাকে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর হতদরিদ্র পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এরপর থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অপচেষ্টা করছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
জানা গেছে, উপজেলার চরফলকন এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে কয়েক বছর আগে ওই তরুণীর পরিবার একই উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের বটতলী এলাকায় বসতি গড়েন। রিকশাচালক বাবা ফেনী শহরে অবস্থানের কারণে মা ও ছোট দুই ভাইসহ তরুণী বাড়িতে ছোট্ট টিনশেড বসতঘরে থাকেন। এতে করে এলাকার কিছু যুবকের কুনজর পড়ে তার ওপর। ঘটনার দিন (৯ ডিসেম্বর) গভীর রাতে পাঁচ যুবক হঠাৎ করে তরুণীর বসতঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে প্রথমে তার মাকে হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। পরে তাদের মধ্যে থেকে একজন তরুণীর কক্ষে গিয়ে মুখ বেঁধে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তাদের (মা-মেয়ে) সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
নির্যাতনের শিকার তরুণীটির মা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে অপরিচিত কিছু যুবক বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নিয়ে যান। স্বামী বাড়িতে না থাকায় প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে মেয়ে ও দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে ঘরের দরজা ভেঙে পাঁচ যুবক ভেতরে প্রবেশ করে তার মুখ চেপে ধরেন।
এসময় মো. রনি নামে প্রতিবেশী এক যুবককে তিনি চিনতে পেরে চিৎকারের চেষ্টা করলে তারা তার মুখে কাপড় গুঁজে দেন। পরে তিনজন তার হাত বেঁধে রাখেন এবং দুইজন মেয়ের কক্ষে যান। একপর্যায়ে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। এসময় মেয়েকে রক্ষায় তিনি বারবার আকুতি করলেও তাদের মন গলেনি বলে তিনি জানান।
তরুণীর মা আরও জানান, ঘটনার বিচার দাবি করলে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত রনি সহযোগীদের নিয়ে বাড়িতে এসে তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে ফেলেন। এসময় কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে রনিকে ছাড়িয়ে নেন। পরবর্তীতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিচারের নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। কিন্তু অভিযুক্তের লোকজন তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসায় দিশেহারা হয়ে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) তার স্বামী বাদী হয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা জানান, নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিনি সর্বস্ব হারিয়ে এখন রিকশা চালিয়ে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিরীহ হওয়ায় অর্থ সঙ্কটসহ স্থানীয়দের বিচারের আশ্বাসের কারণে থানা-পুলিশের ধারস্থ হননি। পরে প্রভাবশালীদের কালক্ষেপণের বিষয়টি বুঝতে পেরে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় চরকাদিরা ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন এবং আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন।
আলেকজান্ডার সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোমবার তারা অভিযোগটি পেয়েছেন। সেনাবাহিনীর একটি গোয়েন্দা দল এ ব্যাপারে কাজ করছেন।