গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডাকা সারাদেশে "কমপ্লিট শাটডাউন" কর্মসূচির মধ্যে বের হয়ে হয়েছিলেন বাসচালক আবু জাফর বাদশা। এসময় পুলিশ ও আন্দোলনকারিদের সংঘর্ষে রাজধানীর গোলাপবাগ এলাকায় বাসচালক বাদশা তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যাক্তির মৃত্যুতে তিন ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা হাসিনা বেগম। বাস চালক আবু জাফর বাদশা মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়নের ছোটমাছুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ হাওলাদারের ছেলে। পরিবারের অভাবের কারণে বাদশা লেখাপড়া করতে পারেননি।
নিহত বাদশার স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, লেখা পড়া করতে না পারার কষ্ট নিয়ে তার স্বামী ছেলেদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। এজন্য শ্যামলি পরিবহনের গাড়ী চালানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ২০১৮সালে অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে ছাব্বিশ লাখ টাকায় কিস্তিতে কাভার ভ্যান কেনেন। কিন্তু কিস্তি দিতে না পারায় ওই টাকার সাথে সুদসহ যোগ হয় আরও দশ লাখ। গাড়ির কিস্তি, পরিবারে খরচ ও তিন ছেলের লেখা পড়া চালাতে পারছিল না।
পরবর্তীতে টাকা না দিতে পারায় অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির কাছে গাড়ি ফেরত দিয়ে দেন। এসময় বড় ছেলে শাওন এইচএসসি পাশ করলেও সংসারের অভাবের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। বাদশার স্বপ্ন মেঝ ছেলে নুহুকে মাওলানা বানাবেন।
নুহু ঢাকা বালুচর ফজলুল হক উলূম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসায় কাফিয়া ক্লাসে, ছোট ছেলে নাঈম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। সংসার চালানো, পড়া লেখার খরচ ও এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আনা ধার দেনা পরিশোধে হিমসিম খাচ্ছিল পরিবার।
কয়েক লক্ষ টাকা ধার দেনা থাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার মধ্যেও গাড়ী চালানোর জন্য গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় ভাড়া বাসা থেকে বের হন শ্যামলি পরিবহনের গাড়ী বের করতে। গাড়ী চালক বাদশা যাত্রাবাড়ী এলাকার গোলাপবাগ ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসলে কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মধ্যে পড়ে গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাদশা। তার সারা শরীর রাবার বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে লুটিয়ে পড়েন। পথচারিরা তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরতরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
পথচারী এক নারী বাদশার হাত থেকে পড়ে থাকা মোবাইল দিয়ে ও রিসিভ করা নম্বর গুলোতে কল করে পরিবারকে জানায়। ময়না তদন্ত শেষে রাত এগারোটায় লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ পাহারায় পরে রাতেই পুলিশ দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দেয় । বাড়িতে লাশ নিয়ে আশার দশ মিনিটের মাথায় পুলিশের চাপের মুখে দাফন সম্পন্ন হয়।
তার স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশেন ও জামায়েতে ইসলাম আট লাখ টাকা সহায়তা দেন। কিন্তু সেই টাকা দেনা পরিশোধ করে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তিনটি সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছি।
স্বামীহারা হাসিনা বেগম আরও বলেন, এখন সংসার ঠিকমত চলছেনা। কি করে মেঝ ছেলে ও ছোট ছেলের লেখা পড়া চালাবো জানিনা! বড় ছেলেটি বেকার। তাকে যদি সরকার একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে মেঝ ছেলে নুহুকে লেখা পড়া করিয়ে মাওলানা বানিয়ে স্বামীর ইচ্ছে স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম। আমি সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আমার স্বপ্ন সাধ চুরমার হয়ে গেছে।