রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
খুঁড়িয়ে চলছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৫ PM
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠানটিতে গুণগত শিক্ষার বদলে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বেহাল দশায় পরিচালিত হচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান যেমন খারাপ তেমনি খারাপ অবস্থা বাহ্যিক অবকাঠামোর। মানসম্মত পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে চলছে প্লে  থেকে পঞ্চম শ্রেণির একাডেমিক কার্যক্রম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলটিতে মোট ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন এমন দাবি করলেও কোনো শ্রেণিতেই ৫-৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী নেই। স্কুলে ছোট ছোট ১০-১১ টি  কক্ষ থাকলেও কোনো কক্ষেই ফ্যান, লাইট ঠিক নেই। নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা।

শ্রেণিকক্ষের জানালা ঠিক না থাকায় শীতকালে হুহু করে বাতাস প্রবেশ করে এবং বর্ষাকালে শ্রেণিকক্ষগুলো পানিতে ডুবে যায়। একটি মাত্র ওয়াশরুম তার অবস্থাও নাজেহাল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সকলে মিলে একমাত্র ওয়াশরুমটি ব্যবহার করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো খেলার মাঠ নেই, নেই এসেম্বলি করা মতো জায়গা।  স্কুলের নামে যে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে সেটিও পড়ে আছে রঙচটা অবস্থায়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ যে একটি  স্কুল রয়েছে সেটিও জানেনা অনেকে। সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা ময়মনসিংহ শহরে অবস্থান করছেন, যার নেতিবাচক  প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড. তপন কুমার সরকার বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে  একটি করে স্কুল এন্ড কলেজ থাকে এবং পড়াশোনার ভালো পরিবেশ থাকে।কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর যে স্কুল টি রয়েছে তার মান আশানুরূপ না হওয়ায় শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা তাদের সন্তানদেরকে পড়াশোনার জন্য তাদের নিয়ে শহরমুখী হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ হবে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশোনার ভালো পরিবেশ তৈরি করা।’

বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের  ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাঃ লুপা খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক। পরিবর্তন  হওয়াটা এখন জরুরী। একটা বোর্ড পর্যন্ত ঠিক নেই। স্কুলের একটা টেবিল সেটাও নিচে ইট দিয়ে কোন রকম চালিয়ে নেওয়ার মতো করে রাখা হয়েছে।স্কুলের পরিচালনার জন্য যে কমিটি আছে গত উপাচার্যের সময় একটা মিটিং ও হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদন থাকলেও ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭তম সভার সুপারিশ এবং ৫০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য 'কিন্ডার গার্টেন' প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল স্থাপনের অনুমোদন দেয়। 

স্কুলটিতে বর্তমানে নামমাত্র বেতনে পাঁচজন শিক্ষক এবং একজন অফিস সহকারী কর্মরত রয়েছেন।স্কুলের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। স্কুলটিতে বর্তমানে কর্মরত সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন। অভিযোগ আছে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যকে চাপ প্রয়োগ করে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাদের স্বজনদের নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছেন। এই অবস্থায় আগের সকল নিয়োগ বাতিল করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বেতনকাঠামোর মাধ্যমে  যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং বিদ্যালয়টিকে স্থায়ী ভবনে স্থানান্তর করে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ চালুর দাবি সংশ্লিষ্ট সকলের। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলটি শুরু থেকেই নাজুক অবস্থানে রয়েছে। মানসম্মত পড়াশোনা নিয়ে অভিভাবকের মনে আশংকা থাকে। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে চলছে স্কুলের কার্যক্রম।  তবে বর্তমান প্রশাসন স্কুলের উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকারে আসবে। শিক্ষক-কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে সর্বদা অবস্থান করতে পারবে। স্কুলের সমস্যার কারণেই এখন অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তার ময়মনসিংহে থাকতে হয়।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্কুল এন্ড কলেজটিকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে।যেভাবে চলছে এটি নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় আছি। আমি ইতোমধ্যে  এই বিষয়ে কথা বলেছি যত দ্রুত সম্ভব যেনো বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল পরিচালনার কমিটি মিটিং এর আয়োজন করে এবং একই সাথে যাতে কার্যক্রম গতিশীল করা যায়।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো.হাফিজুর রহমান বলেন,‘স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অর্গানোগামে স্কুল এন্ড কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের অনুমোদন রয়েছে।ইউজিসি ২০১৭ সালে ছোট পরিসরে শুরু করার অনুমোদন দেয় এখন বৃহত্তর পরিসরে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।আমরা একই সাথে কলেজের অনুমোদন এবং স্কুলের এক্সটেনশন এর জন্য চেষ্টা করছি।’

স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড.মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স) বলেন, ‘স্কুলের ব্যাপারে আমরা ফেডআপ। স্কুলের প্রয়োজনীয়তা যে সময়ে অনুভব করেছে সে জায়গা থেকে উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই।উদ্যোগটি মহৎ ছিলো হয়তো প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি। আমরা আমাদের কমিটির মিটিং শুরুর পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের পুরোনো এবং নতুন দুটো ভবনেই ভিজিট করবো। তারপর মিটিংএ বসবো। মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বরাবর শিক্ষক নিয়োগ সহ যাবতীয় বিষয়ে আবেদন জানাবো এবং স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী পরামর্শ চাইবো।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যে পরামর্শ দিবে সে অনুযায়ী কাজ করবো।

বর্তমানে স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,স্কুল এন্ড কলেজের যে কমিটি রয়েছে ওই কমিটিতে দ্রুত একটি সভার  আয়োজন করবো। সভায় স্কুল এন্ড কলেজ সংক্রান্ত সকল বিষয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবো এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বরাবর আবেদন জানাবো।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত