ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে এবং বিপ্লবের সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে আগামীকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণা দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ঘোষণাপত্রকে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে সরকার।
ঘোষণাপত্র ঘিরে ‘থার্টিফার্স্ট ডিসেম্বর, নাউ অর নেভার’—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অনেকের এমন নানা পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে কী থাকছে কিংবা অভ্যুত্থানের এতদিন পরে কেন এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আগ্রহ তৈরি হয়েছে, বিরাজ করছে জল্পনা-কল্পনা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতন নিশ্চিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের নতুন দ্বার উন্মোচন করার জন্য যে যেভাবে পেরেছে আন্দোলনের সময় যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছে। এই আন্দোলনে দুই হাজারের মতো মানুষ শহীদ হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এত বড় একটা ঘটনার এখন পর্যন্ত কোনো দালিলিক স্বীকৃতি নেই। এ স্বীকৃতির প্রয়োজন আমরা এই মুহূর্তে অনুভব করছি। এটা না হলে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ‘গণঅভ্যুত্থান হয়নি’ বলে প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, আমরা যারা জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি, তাদের জন্য এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জুলাইয়ে আমরা খুনি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমাদের আন্দোলনে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে ‘পতিত স্বৈরাচার’ এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং এই আন্দোলনকে সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা দিতে প্রোক্লেমেশনের (ঘোষণাপত্র) দরকার, যাতে পতিত স্বৈরাচার চব্বিশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায়।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর মাধ্যমে ‘মুজিববাদী’ সংবিধান হিসেবে তুলে ধরে তার কবর রচনা করারও ঘোষণা দেন সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের অগ্রজ হিসেবে কষ্ট পাই। কথাটা এভাবে বলা কি ঠিক হলো! ওই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে, নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। তাই বলে কবর দিয়ে ফেলব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব—এসব কথা ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আমরাও তাকিয়ে আছি আপনাদের দিকে। আপনাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমরা আশা করি না।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখভাগে থেকে অংশগ্রহণ করেছি। ১৯৭১ সালে আমার বহু বন্ধু শহীদ হয়েছে। শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।’