খুলনার নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ গত ১৫ বছর ছিল সাবেক এমপি শেখ হেলালের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে গেলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কার্যকরী কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন। গত ৪ মাসের মধ্যে অ্যাডহক কমিটি নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি। গত রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে এক দল যুবক সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে দিয়ে আসে।
খুলনা নগরীর বেসরকারি সবুরুণনেছা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে গত ১০ নভেম্বর ঢুকে পড়ে এক দল তরুণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয় দেয় তারা। অধ্যক্ষকে খুঁজতে থাকে পদত্যাগ করানোর জন্য। ওই সময় অধ্যক্ষ কলেজে ছিলেন না। তারা সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যায়। দেড় মাসেও সেই তালা খোলা হয়নি। কলেজের ১৭টি ল্যাপটপ, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তালাবদ্ধ। যার কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসও বন্ধ।
শুধু এই দুটি প্রতিষ্ঠানই নয়, পরিকল্পিতভাবে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান অচল করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। গত তিন মাসে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা ক্লাব, খুলনা চেম্বার অব কমার্স এবং নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে একইভাবে। বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতারা এসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেলে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো পরিচালনা করছিলেন দলনিরপেক্ষ ব্যবসায়ী সংগঠক ও বিএনপি সমর্থিতরা।
দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীসহ তরুণদের ভুল বুঝিয়ে ব্যবহার করছে একটি পক্ষ। কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছে। চেম্বার অব কমার্সের কমিটি ভাঙার দিন ছাত্র পরিচয়ে মুরগি বিক্রেতা, টোকাইরা মবে অংশ নিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা হয়। এ ছাড়া খুলনা ক্লাবে পছন্দের ব্যক্তিদের চেয়ারে বসানো নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ছাত্ররা। এ নিয়েও সমালোচনা চলছে।
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্র প্রতিনিধি এই প্রক্রিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিছুদিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা সব ধরনের ‘মব’ তৈরি (তরুণদের সমবেত করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ) থেকে বিরত থাকা এবং প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন দখলে না জড়াতে ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মালিক গ্রুপে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন। এর পর থেকেই সংগঠনটি দখলের তোড়জোড় শুরু হয়। অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব কাজী ইমাম হোসেন বাদশা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। যে যেভাবে পারে, সমিতি নিয়ে নিলে আমরা বেঁচে যাই।’
গত ৪ অক্টোবর শহীদের পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিঅ্যান্ডএফের ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্ররা। ছাত্রদের দাবির মুখে আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সংগঠনের উপদেষ্টা ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন ব্যবসায়ীরা। এর পাল্টা কমিটি গঠন করে বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের আরেকটি অংশ। ওই কমিটিতে মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতির ভাই জনিকে সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়াও, গত ২০ নভেম্বর ছাত্রদের একটি অংশ মোশাররফ-জনির পক্ষ নিয়ে তাদের ভবনে গিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু কর্মচারী ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তারা কাজ করতে পারেননি। বর্তমানে সংগঠনে অচল অবস্থা বিরাজ করছে।