রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকার ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না’ বলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের ভাষ্য।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, তাতে মনে হয় না যে মানুষের কষ্ট হবে। জিনিসপত্রের দামের ওপরে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের ওপর সব ভ্যাট শূন্য করে দিয়েছি। মূল্যস্ফীতির মূল ইন্ডিকেটর হচ্ছে চাল-ডাল ইত্যাদি। যেসব জিনিসের দাম বাড়িয়েছি সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই ইনসিগনিফিকেন্ট।”
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আইএমএফ চলতি অর্থবছর বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে। সে কারণে অর্থবছরের মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ ভ্যাটের বোঝা বাড়ানোর পথে হাঁটছে এনবিআর। এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্য ও সেবায় বর্তমানে ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।
ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টি, মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া, বিমানের টিকিটসহ সিগারেট এবং তামাক রয়েছে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক-করের তালিকায়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তিন তারকার ওপরের রেস্টুরেন্টগুলোতে ভ্যাট বাড়িয়েছি। সেখানে কারও খরচের ওপর ১০ টাকা যোগ হলে খুব একটা মনোবেদনার কিছু আছে বলে মনে হয় না। আমি তো বলছি না যে ভাতের হোটেলে বাড়তি ভ্যাটের জন্য যাবে। যাদের টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার ওপরে তারাই এটার আওতায় আসবে। অন্য কোনো ব্যবসা তো এটার মধ্যে আসছে না।
বিমান ভাড়াতেও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে– এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ছিল, সেটা ২০০ টাকা বাড়িয়েছি। এটা কেউ দিতে পারবে না বলে মনে হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এত কম ট্যাক্স নেই। কিন্তু জরুরি পণ্যগুলোতে আমরা প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি ভ্যাট-ট্যাক্স। যেসব ছাড় দিয়েছি তা ক্যালকুলেট করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব গ্যাপ এত বেশি যে, এত বড় ঘাটতি বাজেট নিয়ে তো সামনে যেতে পারব না।
অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বিদেশি ঋণ নিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এটা (ভ্যাট বৃদ্ধি) আইএমএফের কারণে নয়। রিসোর্স গ্যাপ হিসাব করে আমরা দেখেছি যে, কত টাকা লাগবে। আমি তো চট করে ইনকাম ট্যাক্স বাড়িয়ে দিতে পারব না। কোম্পানি ট্যাক্স এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। সবকিছু সার্বিক চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।