শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ৫ মাঘ ১৪৩১
শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
শেরপুরে শিমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:০৪ PM
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলা সহ ৫ টি উপজেলায় এ বছর ৬২০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভালো উৎপাদন এবং বাজারে ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা বেশ খুশি। 

এলাকার কৃষকরা জানান, এই এলাকায় কেরালা, নলডুগ ও গুতুম জাতের শিমের চাষ হয়ে থাকে। আগাম জাত এবং ফলন ভালো হওয়ায় কেরালা শিম চাষে লাভ হয় বেশি।

জেলার শিম পল্লি হিসেবে পরিচিত ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের সন্ধাকুঁড়া, গারোকোনা, গোমরাহ, ফাকরাবাদ, ভারুয়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শিমের চাষ করা হয়েছে। যেদিকেই তাকানো যায় কেবল শিমের ক্ষেত চোখে পড়ে। থোকায় থোকায় ঝুলছে শিম। কৃষকরা কেউ ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন, কেউ শিম তুলছেন আবার কেউ শিম নিয়ে বিক্রির জন্য ছুটছেন বাজারে।

এসব এলাকার উঁচুনীচু জমি একযুগ আগেও প্রায় অনাবাদি পড়ে থাকতো। ফলে অভাব-অনটন ছিল এখানকার কৃষকদের নিত্যদিনের সাথি। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি, পাথর ভাঙা, লাল বালু তোলার শ্রমিকের কাজ করে অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহ হতো। সবজি চাষ করে বর্তমানে এসব এলাকা কৃষকের জিবন বদলে গেছে। যে জমিতে একমাত্র কাসাভা আলু ছাড়া কোন ফসল বলতো না সেই জমিতে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে বছরব্যাপী বিভিন্ন জাতের সবজি ফলিয়ে আজ তারা তাদের জীবনে এনেছেন সচ্ছলতা।

এক সময়ের অভাবী এলাকা হিসেবে পরিচিত এসব গ্রামগুলো এখন শিম পল্লি হিসেবে একনামে পরিচিত। এখন বছরব্যাপী ফলে নানা প্রজাতির শীম। বর্তমানে এসব গ্রামে কেরালা, নলডুগ ও গুতুম জাতের শিমের চাষ করা হচ্ছে। আগাম জাতের কেরালা শিম চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলে গেছে বলে জানান এলাকার কৃষকরা।

এসব সবজি বিক্রির জন্য চাষিদের দূরে যেতে হয় না। কাছেই সীমান্ত সড়কে গারোকোনা চৌরাস্তায় গড়ে উঠেছে সবজির হাট। যেখানে প্রতিদিন ভোর ৬ টার মধ্যে পাইকারি ও খুচরা সবজি বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠে। এখান থেকে পাইকাররা শিম কিনে নিয়ে ট্রাক পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

ফাকরাবাদ গ্রামের  চাষি মো. আব্দুল জলিল বলেন, '১২ শতাংশ জমিতে আগাম কেরালা শিম চাষ করে এক লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আরো ২০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছি।'

গুমড়া গ্রামের কৃষক মুক্তার আলী বলেন, 'এক বিঘা করে তিন বিঘা জমিতে কেরালা, নলডুগ ও গুতুম জাতের শিমের চাষ করেছি। নলডুগ শিমের মাত্র উৎপাদন শুরু হয়েছে। গুতুম এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি, কেবল ফুল এসেছে। আগাম জাতের কেরালা এক লাখ আশি হাজার টাকা এবং নলডুগ শিম ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরও অন্তত চার লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব।

গারোকোনা বাজারে শিম বিক্রি করতে আসা কৃষক আব্দুল মিয়া বলেন, '২৫ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। গাছে আরো প্রচুর শিম আছে। শিমের চাষ করে আমি খুবই লাভবান হয়েছি।'

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'শেরপুর জেলার মাটি সবজি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানকার কৃষকরা আগাম সবজি চাষ করে। এ বছর ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও সদর উপজেলা সহ জেলার ৫ উপজেলায় ৬২০ হেক্টর জমিতে সিমের চাষ হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা এসব শিম দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। আমরা তাদেরকে সবসময় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।'

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত