আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে রাজনৈতিক অতিকথন ও বন্দনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির পরিবর্তিত পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের নানান গল্প, ছবি, কার্টুন, গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন বিষয়।
চার নেতার বিবরণীতে স্থান পেয়েছেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণায় স্থান পেয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান। পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত শেখ মুজিববন্দনা।
জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর বাড্ডায় হেলিকপ্টার থেকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শহীদ হওয়া আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম যুক্ত করা হয়েছে। নতুন পাঠ্যবইয়ে জন-আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
এনসিটিবির তথ্য মতে, ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপানো হয়েছে। কার্টুনের ছবির মাধ্যমে যে প্রতিবাদ বা বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটে, তা দেখানো হয়েছে এই লেখায়। এখানে বলা হয়েছে, ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বারবার কার্টুনে প্রতিবাদের প্রকাশ দেখা গেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে অসংখ্য গ্রাফিতির কথাও বলা হয় এই লেখায়। এই লেখায় কার্টুনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার চিত্র।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ অধ্যায়টি। এই অধ্যায়ের সংযোজন করা হয় জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সরকার। উঠে আসে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অবদানের কথাও। এ অধ্যায়ে বলা হয়, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচি গতি হারাতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসেন।
আরেক অধ্যায়ে বলা হয়, সাবেক সরকারের দানবীয় শাসন চালানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছিল প্রধান অবলম্বন। কিন্তু লোকে দেখল হাজার সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে। জাল সনদ সংগ্রহ করে চাকরির সুবিধা নিয়েছে অনেকে। সরকার সব অনিয়ম অবৈধতাকে ঢেকে দিতে চেয়েছে অবকাঠামোগত ‘উন্নয়নের গল্প’ দিয়ে।
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই আন্দোলন নিয়ে ‘সিঁথি’ নামে কবিতা। কবিতায় বলা হয়েছে, ভাই মরলো রংপুরে সেই/ রংপুরই তো বাংলাদেশ। কবিতায় বলা হয়, খোদার আরশ কাঁইপা ওঠে/ শুইনা বাপের হাহাকার/ একটা মানুষ মারার লাগি/ কয়টা গুলি লাগে ছার? আন্দোলন চলাকালে একজনকে মারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর্যুপরি গুলির বিষয়টিও উঠে এসেছে।