বিগত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে তিন দিনের মধ্যে থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়।
লুট হওয়া এসব অস্ত্রের বেশিরভাগ উদ্ধার করা গেলেও এখন অবধি কারাগারের ২৮টি রাইফেল ও পুলিশের ১৩৯৯টি অস্ত্র অর্থাৎ মোট ১৪২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। বিষয়টিকে দেশের নিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। প্রথম দিকে স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ধীরে ধীরে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে থাকে।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পুলিশ লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র জমার দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়। সময় শেষ হওয়ার পরপরই লুট হওয়ার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পুলিশ অভিযানে নামে, যা এখনো চলমান। এরইমধ্যে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনবধি যেসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি পারেনি সেগুলোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্রগুলো যদি সন্ত্রাসীদের হাতে গিয়ে থাকে তাহলে এটা নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বলেন, সে সময় ৫৮টি থানায় অগ্নিসংযোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৫৬টি থানায় ভাঙচুর হয়। আনুমানিক মোট ১১৪টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ সময় পুলিশের অস্ত্র লুট হয় পাঁচ হাজার ৭৫০টি। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার হয় চার হাজার ৩৫১টি। আরও এক হাজার ৩৯৯টি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া গোলাবারুদ লুণ্ঠিত হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯। উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৯।
ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারাগারে থাকা ৮২৬ জন বন্দি পালিয়ে যায়। সে সময় ৮৫টি চাইনিজ রাইফেল লুটের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ৫৭টি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। বর্তমানে ২৮টি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ জেলপলাতক আসামি, দাগি সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থি, চরমপন্থি, কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়টি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি সারা দেশে খুন, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। রাত যত গভীর হতে থাকে সড়কের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এসব অপরাধীদের হাতে। বিশেষ করে রাজধানীতে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিনতাই নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পূর্ব শত্রুতা, ব্যক্তিগত বিরোধ ও আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা বেড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অপর একটি সূত্র জানান, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন ধরনের গুলি।