কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে সরে এসে আবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সুদীপ চাকমা।
পক্ষে
(গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির প্রক্রিয়া একজন শিক্ষার্থীকে আর্থিক ও শারীরিক নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে)
বায়েজিদ হোসেন
আইন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে, যা তাদের আলাদা আলাদা আবেদন ফি এবং যাতায়াত খরচ থেকে বাঁচায়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে এক দিনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একসাথেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। এবং তাদের হাতে থাকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ, যা স্বকীয় পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেই সুযোগ থাকে না। তাছাড়া মাইগ্রেশন সুবিধা ফলে শিক্ষার্থীরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিভাগে স্থানান্তরিত হতে পারে।
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে এক জন শিক্ষার্থীকে নানাবিধ সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাতায়াতের সেই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। সর্বোপরি গুচ্ছ পদ্ধতি মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি সুবিধা। কারণ তাদের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা দিতে পারে। এবং গুচ্ছ পদ্ধতি সরাসরি শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও শারীরিক যাতায়াত সমস্যার সমাধান করে, তাদের জন্য আরও ন্যায্য ও সুবিধাজনক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুবিধা প্রদান করে।
(গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য দূর হয়েছে)
তাসমিয়া তানহা
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
পুরো বাংলাদেশ জুড়ে বিভিন্ন জেলায় মোট ৫৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে কম বেশি সকল শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট পাওয়া। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় নারী শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ তাদের নিজ অঞ্চল ব্যতীত অন্য অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয় না দূরত্বের জন্য।
এই ক্ষেত্রে গুচ্ছ পরীক্ষা অনেকের জন্য স্বস্তির কারণ। তাছাড়া গুচ্ছ পরীক্ষার কারণে বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে শিক্ষার্থীরা একত্রে পড়াশোনার একটি সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য হচ্ছে না বরং আঞ্চলিক সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটছে। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীদের আগে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হতো, গুচ্ছের ফলে এখন আর সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় না।
বিপক্ষে
(গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে না)
মো. পাবেল রানা
মার্কেটিং বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে। কেননা গুচ্ছ পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেমন প্রশ্ন প্যাটার্ন নিয়ে পরীক্ষা নিবে এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারে না। তাছাড়া গত পাঁচ বছর কুবিতে পড়ার সুবাদে দেখে আসছি যে, গুচ্ছের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে।
আমি লক্ষ্য করেছি যে, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবীদের ভর্তিতে অনাগ্রহ, স্বকীয়তা হারানো, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী না পাওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও পরিচিতি এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুর ক্ষতিসহ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
গুচ্ছ ভর্তি পক্রিয়ায় দীর্ঘ মাইগ্রেশন সিস্টেমের ফলে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে ও ভাইবা দিতে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী নিজেও জানে না যে, তার মাইগ্রেশন হয়ে সে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছে। এতে করে সে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হয়েও তার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
(গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ)
নুসরাত প্রিয়াম মিতু
মার্কেটিং বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করতে হয়। তাছাড়া একবার ভর্তি হওয়ার পরে আর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে না।
বিশেষ করে যদি বলি এই বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয় অক্টোবরের শুরুতে। আর সর্বশেষ ৬ষ্ঠ মাইগ্রেশন শেষ হয় ডিসেম্বরের শুরুতে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় তিন মাসের মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে। যেখানে একটি সেমিস্টারের সময়সীমা থাকে চার থেকে পাঁচ মাস। ফলশ্রুতিতে একজন শিক্ষার্থী সেমিস্টারের শেষ দিকে ভর্তি হওয়ার ফলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মেলাতে পারে না।
তাছাড়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ হয় এতে করে শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না। কম নাম্বার তুলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। আবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট আছে প্রথমে সেখানেই ভাইবা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। আবার পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্ট আসলে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সেখানেও ভর্তি হওয়া লাগে। এতে করে মন না চাইলে একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন জায়গাই গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে হয়। যা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার এর জন্য এই খরচ বহন করা খুব কষ্টকর।