রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
রবিবার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষক
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:০৭ PM
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আ’লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার রোষানলে ৫ মাসাধিক পালিয়ে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

উপজেলার মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজের আ’লীগ নেতা ও প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খান চরম দুর্ণীতি, দলীয়করণ ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যান। স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) মো. এনামুল হক মৃধা পলাতক প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খানের বেতন-ভাতার সুযোগ করে দেয়ায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আলমগীর হোসেন খান উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

জানাযায়, আলমগীর হোসেন খান ২০১০ সালে ক্ষমতাসীন আ’লীগের প্রভাব খাটিয়ে মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয়করন, দুর্ণীতি ও অনিয়মের আখরায় পরিনত করেন। তার ১৩ বছরের চাকরীকালে নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন, পরিক্ষার ফি, টিউশন ফি, মোবাইল ফোনের টাওয়ার ভাড়া, ২৯ টি স্টল ভাড়া এবং মোটা অংকের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বসবাসকারীদের প্রতিষ্ঠানের জমি ছেড়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রযেছে। বিজ্ঞনাগার, শহীদ মিনার, পুকুর খনন ও আইসিটি ল্যাবসহ বিভিন্ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি আ’লীগ অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। ৫ আগষ্ট দুপুর পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীসহ লাঠি সোটা নিয়ে মিরুখালী বাজারে বিরোধী দল দমনে মহরা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে দেয়াল লিখন করলে আলমগীর হোসেন খান ওই শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে।

দেয়াল লিখনে অংশ গ্রহনকারী এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাহাদ আমীনের পিতা অবসরপ্রাপ্ত উপ সহকারী মেডিকেল অফিসার ও স্থানীয় জামায়াত ইসলামী নেতা ডা. নুরুল আমিন জানান, সেদিন তাদের দিয়ে দেয়াল লিখন মুছতে বাধ্য করা হয় এবং চরমভাবে লাঞ্চিত করা হয়।  আরেক অভিভাবক স্কুল শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন স্কুলে এখনও সরকারী বই বিতরণের সময় সেশন চার্জের নামে টাকা নেয়া হয়।

আলমগীর হোসেন খানের দুর্ণীতি ও অনিয়মের তদন্ত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদনকারী গোলাম কিবরিয়া বাচ্চু জানান, তাদের আবেদনের পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার পর ২ মাস কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খানকে পূনর্বাসনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মৃধা তাকে বেতন ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি, সাবেক মিরুখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান খোকন জানান, ফ্যাসিবাদের দোসর আলমগীর হোসেন খাণ এবং তার দোসররা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংশ করে দিয়েছে। তাকে আবার পূনর্বাসন 
করা হলে তারা মেনে নেবে না বলে তিনি জানান।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক মৃধা জানান, কারো অনুপস্থিতিতে ৪ মাস বেতন দেয়া যায়। আর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেতন ভাতা করেন। এখানে তার কোন হাত নেই। বই বিতরণের সময় সেশন চার্জ ছাড়া আর কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না বলে তিনি 
জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাইয়ুম জানান, অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন খানের বিরুদ্ধে করা দুর্ণিতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে রিপোর্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বেতন বন্ধ করা না করা অধিদপ্তরের উপর নির্ভর করে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত