রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫
জনপ্রিয় হচ্ছে পাহাড়ের টক ফলের রোজেলা চা
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:৩০ PM
বাড়ির আশপাশ কিংবা পাহাড়ের ঝোপঝাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এ উদ্ভিদ। কেউ কেউ এটিকে আগাছা হিসেবে ভেবে থাকেন। এই উদ্ভিদের নাম রোজেল।

এর বৈজ্ঞানিক নাম হিবিস্কাস সাবদারিফা। সংস্কৃত নাম আমবাস্তকি। তবে অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। কেউ চেনে চুকাই, চুকুরি, মেস্তা আবার কেউ বা হড়গড়া ও হইলফা নামে। পাহাড়ের মানুষ এটিকে চিনে টক পাতা গাছ হিসেবে। একসময় কোন এর গুরুত্ব ছিলনা কারো কাছে। তবে বহুকাল থেকে বান্দরবান জেলায় নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজন জুম আবাদের সাথে এ গাছের কিছু কিছু বীজ বপন করে থাকেন। 

ওষুধি গুণের কারনে এই রোজেল উদ্ভিধ বর্তমানে আলোচনায় উঠে এসেছে। এর ফল থেকে তৈরি হচ্ছে জনপ্রিয় রোজেলা চা।এই রোজেলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বান্দরবানের কৃষক কৃষাণীরা।

এ গাছের পাতা কিছুটা সবুজ ও ফল গভীর লাল রঙের হয়। পাতা ও ফল উভয়ে টক স্বাদের। ইদানিং এর ফল দিয়ে তৈরি হচ্ছে চা। যা রোজেলা চা নামে পরিচিত। সম্প্রতি সময়ে রোজেলা চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জুমচাষের সময় বা বর্ষা মৌসুমে এ বীজ বপন করা হয়। ডিসেম্বর জানুয়ারি ফল সংগ্রহের সময়। এখন ফল সংগ্রহ প্রায় শেষের দিকে। এই ফল সংগ্রহ করে ভিতরের বোটা ফেলে উপরের পাপড়ি বা খোঁসা রোদে শুকাতে হয়। শুকানো পাপড়ি বিক্রি হয় কেজিতে। প্রতি কেজি রোজেলা বা চুকাই এর বিক্রি মুল্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রথম এ ফলের বেচা কেনা শুরু হয়েছে। আলীকদমের দোছড়ি এলাকার কৃষক চৈংরাঙ লামার সাবেক বিলছড়ি এলাকার কৃষক চামাচিং মার্মা এ বছর কিছু ফল বিক্রি করেন।
কৃষাণী চামাচিং মার্মা জানান, বংশপরস্পরায় আমরা বাগান বা জুমচাষের আশেপাশে সামান্য কিছু টক ফলের বিজ বপন করে থাকি। শুনেছি এই ফলকে নাকি এখন রোজেলা বলে। এ ফলের পাতা সবজি কিংবা সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়।ফলও খাওয়া যায় ভাজি করে। তবে ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে আমরা বিক্রি করিনি কখনও। এ বছর থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে ফল কিনেছেন। আমি কাঁচা অবস্থায় ৫ কেজি ফল বিক্রি করেছি। কাঁচা ফলের চেয়ে শুকিয়ে বিক্রি করলে আরও লাভ বেশি পাওয়া যায়। আমি আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে এক একর জমিতে রোজেলা আবাদ করব।

বান্দরবানে প্রথম রোজেলা ফল বা চুকাই কিনেন লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়া এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, এ অঞ্চলে আমি প্রথম রোজেলা ফল কিনা শুরু করি। গত বছর আমি ৫০ কেজি ফল কিনেছি। এবছর ২০০ কেজিরমত কিনেছি। এখানে কেউ এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেনি। তবে এ ফল বিক্রি হচ্ছে দেখে আগ্রহী হচ্ছেন বহু চাষী। প্রতি কেজি রোজেলা ফলের বাজার মুল্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আরও দুই তিন গুন বেশি। তবে সরকারি সহযোগীতা পেলে কৃষকরা তামাক ছেড়ে রোজেলা ফলচাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

চা তৈরির জন্য চার থেকে পাঁচটি শুকনা রোজেলা বা চুকাই পানিতে দিয়ে জ্বাল দিতে হয়। হালকা গোলাপি রং আসলে নামিয়ে নিতে হবে। ওই পানি খেতে টক টক লাগবে। কিন্তু কোনো কিছু না মিশিয়ে সেই পানি চা হিসেবে পান করতে হবে।

চিকিৎসকদের মতে, এই রোজেলা চা স্বাস্থ্যকর পানীয়। নিয়মিত রোজেলা চা পান করলে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ গাছের ফলে আছে প্রচুর  ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর পরিমান কমলালেবুর তুলনায় প্রায় ৯ গুণ এবং পেয়ারার তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। তাছাড়া আছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

এছাড়াও রোজেলা ফল দিয়ে তৈরি হচ্ছে আঁচার, চাটনি ও সস। দেশের বাজারে রোজেলা ফলের চাহিদা বেড়েছে বহুগুনে। তাই সরকারি সহযোগীতা পেলে এ চাষে আগ্রহী হবে কৃষক। একসময়ের আগাছা হিসেবে জন্মানো রোজেল ফল বা পাহাড়ী টক ফল দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ভাগ্যের চাকা ঘুরবে কৃষকের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান জানান, রোজেলার এখনও বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়নি। তবে পৌরসভার সাবেক বিলছড়ি এলাকার মোহাম্মদ কাউছার আমার কাছে একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। প্রকল্পটি আমরা অধিদপ্তরে পাঠাব।যদি অনুমোদন হয় তাহলে রোজেলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হবে আশা করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ বান্দরবান অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, বান্দরবানে কিছু কৃষক বিচ্ছিন্নভাবে রোজেলা চাষ করছেন। এখনও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার পরিবেশ গড়ে উঠেনি। তবে কৃষকদের আগ্রহ দেখলে বাণিজ্যিক চাষের প্রকল্প গ্রহনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত