সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
আ.লীগ নেতাকে না পেয়ে ‘ক্যান্সার আক্রান্ত’ স্ত্রীকে গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২:৪৬ PM
চট্টগ্রামের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিমকে না পেয়ে তার ক্যান্সার আক্রান্ত অসুস্থ স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলায় জসিমের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

তবে ওই মামলার ৮৩ জন আসামির মধ্যে তিনি ছাড়া একজনও মহিলা নেই। এজাহারভুক্ত আসামি না হয়েও তাসলিমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তাসলিমা কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, বরং তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে এবং পরবর্তীতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আকবরশাহ এলাকায় অবস্থিত ১৩ তলা একটি ভবন ঘিরে ফেলে। তাদের কাছে তথ্য ছিল, সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সেখানেই লুকিয়ে আছেন। পুলিশের সঙ্গে 'সমন্বয়ক' পরিচয় দেওয়া কিছু যুবক এবং স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল জসিমকে গ্রেপ্তার করা। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। তখন 'সমন্বয়ক' পরিচয়ধারী যুবকদের সাথে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর চাপ দিতে থাকে, জসিমকে না পেলে তার পরিবারের কাউকে ধরে নিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে এবং আলমারি ও ওয়্যারড্রোব খুলে দেখতে থাকেন। অনেকে সন্দেহ করছিলেন, জসিম ভবনের কোথাও বিপুল পরিমাণ টাকা লুকিয়ে রেখেছেন। অবশেষে, রাত ১২টার দিকে পুলিশ ভবনটি ত্যাগ করে, কিন্তু তার আগে একটি সিদ্ধান্ত নেয়— জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা সমালোচনা করে পুলিশের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন- এই মামলায় ৮৩ জন আসামির মধ্যে কেন মাত্র একজন নারী? তাসলিমার নাম এজাহারে নেই, তাহলে তাকে কীভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হলো? একজন ক্যান্সার আক্রান্ত নারী কীভাবে একটি সহিংস ঘটনায় জড়িত হতে পারেন?

ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ বলেন, আমরা তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে দেখিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে তাকে জেলহাজতে রাখা হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত নারীকে গ্রেপ্তার করা ন্যায়সঙ্গত নয়। ৪২ বছর বয়সী তাসলিমা বেগমের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তিনি স্তন ক্যান্সারের টাইপ-টুতে আক্রান্ত এবং বর্তমানে নিয়মিত কেমোথেরাপি নিচ্ছেন।

ব্রেস্ট ক্যান্সারে ভুগছেন বহুদিন ধরে
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাসলিমা দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সার টাইপ-টুতে আক্রান্ত। তিনি এর আগে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেডিওথেরাপিও চলে তার। বর্তমানে তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ডা. রশীদুন নবীর কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ক্যান্সারের জন্য তিনি বর্তমানে ‘জোলাডেক্স’ কেমোথেরাপির অষ্টম ডোজ শেষ করে নবম ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

তাসলিমার এক স্বজন জানান, তার তিন সন্তানই অপ্রাপ্তবয়স্ক। এর মধ্যে বড় মেয়ে আরিবার বয়স ১৪, ছোট মেয়ে আইভীর বয়স ৯ এবং একমাত্র ছেলে আরিয়ানের বয়স মাত্র ১২।

গ্রেপ্তারের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “তাসলিমার অবস্থা খুবই গুরুতর। চিকিৎসা ছাড়া তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।”
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত