মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রাম নগরীতে হেলপার ছাড়াই চলছে গণপরিবহন
কামরুজ্জামান রনি, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২:৪৪ PM আপডেট: ২০.০২.২০২৫ ৩:০৬ PM
চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন গুলো গণহারে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যত্রতত্র গাড়ী থামিয়ে যাত্রী উঠানামা এখন অতিসাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

গণ পরিবহন গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাস-মিনিবাস ছাড়া অন্য সব হিউম্যান হলার গুলো চলছে হেলপার ছাড়াই। ফলে সড়কে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে এসে চালকের কাছে ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে৷ আর এই ভাড়া আদায় আর ভাংতি টাকা লেনদেনের কারণে সড়কে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকছে টেম্পো, মাহিন্দ্রা, টিকটিকি, লেগুনা, রাইডারের মতন যানবাহন গুলো। 

নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটে অনুমোদিত এবং অবৈধ গণ পরিবহন চলাচল করছে৷ এসবের মধ্যে শুধুমাত্র বাস গুলোতে একজন হেলপার দেখা যাচ্ছে। অথচ কয়েল বছর আগেও নগরীতে চলাচল করা টেম্পো ও অন্যান্য ছোট আকৃতির গণপরিবহন গুলোতে একজন করে হেলপার দেখা যেতো। গাড়ী চলার পথে চালককে সহযোগীতা করার পাশাপাশি এসব হেলপারেরাই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করতো৷ ফলে যাত্রী নামানোর সময় গাড়ী গুলোকে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না৷ কিন্তু বর্তমানে এসকল পরিবহনের কোন হেলপার না থাকায় চালককে একাই সব দ্বায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় রবি কাস্টমার কেয়ারের সামনে একে একে এসে থামছে সবুজ রঙের মাহিদ্রা আর মেক্সিমা ধরণের পরিবহন৷ গাড়ির পেছন থেকে যাত্রীরা নেমে গাড়ির সামনে এসে চালককে একে একে ভাড়া পরিশোধ করছে৷ চালক এক এক করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে। চালক নির্ধারিত ভাড়ার টাকা নিয়ে অবশিষ্ট টাকা যাত্রীকে ফেরত দিচ্ছে। ভাড়া নেয়া ও খুচরো টাকা ফেরতের এই লেনদেন যখন চলে তখন পেছনে আরো বেশ কয়েকটি গাড়ি এসে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে একই নিয়মে ভাড়া আদায় করে। এসবের ফলে সড়কের একাংশ প্রায় সব সময় এসব ছোট পরিবহনের দখলে থেকে যায়৷ একই চিত্র দেখা যায় নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে জিইসি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট হয়ে কালুরঘাট ও কর্বফুলী সেতু পর্যন্ত চলাচল কারি ছোট আকারের গণপরিবহন গুলোতে। 

ঝুঁকি নিয়ে ঝুলছে যাত্রী : গণপরিহন আইনে পরিবহনের আসন ভেদে ভাড়া ও রুট পারমিট ইস্যু হয়ে থাকে৷ অথচ শহরে চলাচলকারী প্রায় সকল গণ পরিবহনের পেছনে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে অফিস ছুটির সময় টেম্পো, মাহিন্দ্রা, টিকটিকি, লেগুনা গুলোতে ৪ থেকে ৬ জন পর্যন্ত যাত্রী সামান্য পা দানিতে ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে (দাঁড়িয়ে) গন্তব্যে যাতায়াত করতে দেখা যায়। আর এসবই নীরব দর্শকের মতন দেখছে এসব সড়কে দ্বায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা৷ 

সড়কের মাঝেই অঘোষিত স্ট্যান্ড : সমগ্র চট্টগ্রাম শহরে সড়কের বাম পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করা হলেও কর্ণফুলী সেতুর (শাহ আমানত সেতু) গোল চত্ত্বরে দেখা যায় ভয়ংকর চিত্র৷ বহদ্দারহাটের দিক থেকে আসা ছোট আকারের সবুজ রঙ্গের টেম্পো গুলো সড়কের মাঝে যাত্রী উঠানামা করানোর অদ্ভুত ও বিপদজনক স্টপেজ বানিয়ে ফেলেছে। এখানে গাড়ী গুলো ইউটার্ণ নেয়ার আগে সড়কের মাঝের ডিভাইডার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নামিয়ে ভাড়া আদায় করে৷ ফলে এই গোল চক্করটিতে যানজট স্থায়ী রুপ নিয়েছে৷ সড়কের মাঝে যাত্রী নামানোর কারণে এই গোলচক্করে দূর্ঘটনার হারও দিন দিন বেড়েই চলে৷ অথচ এই গোল চত্বরে একাধিক সার্জেন্ট ও ৩-৪ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়। অভিযোগ আছে এই রুটে অবৈধ গাড়ীর সংখ্যা বেশী তাই টোকেনের দামও বেশী৷ সেই কারণে এই টেম্পো স্ট্যান্ডের দখল দিতে প্রায়স একাধিক গ্রুপের মধ্যে মারামারি লেগেই থাকে৷ 

অঘোষিত লাইন চুক্তি : সড়কের গণ পরিবহন গুলোর যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা এবং ট্রাফিক আইন ভংগের পাশাপাশি বেশীর ভাগ পরিবহন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই চালানো হচ্ছে৷ এছাড়া কয়েকটি রুটে এসব যানবাহন চলছে রুট পারমিট ছাড়াই। সংগত কারণে প্রশ্ন জাগে, এসব কিভাবে চলছে ? পরিবহন চালক, রুট ভিত্তিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতিটিদিন প্রতুটি রুটের যানবাহন থেকে নির্ধারিত অংকের চাঁদা আদায় করা হয়৷ সেই চাঁদার একাংশ প্রতিদিন পৌছে আচ্ছে রুট গুলোতে দ্বায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হাতে৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সমিতির নেতা বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, নির্ধারিত অংকের চুক্তিতেই এসব যানবাহন চলাচল করছে। রুট পারমিট ছাড়া গাড়িও সেই চুক্তিতে লাইনে চলাচল করছে ৷ সেই টাকার ভাগ পৌছে যাচ্ছে কতিপয় অসাধু ট্রাফিক পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের পকেটে নুরুল আলম নামের এক টেম্পো চালক বলেন, "ঘাটে ঘাটে চাঁদার টাকা দেয়া লাগে, তাই খরচ বাঁচাতে আমরা আর হেলপার রাখি না৷"

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ডিসি ( অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "সড়কের শৃংখলা রক্ষায় ট্রাফিক পুলিশ নিরস কাজ করে যাচ্ছে৷ হেলপার ছাড়া যান চলাচলের বিষয়টির আইনী দিক খতিয়ে দেখে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে৷" 

যত্রতত্র যানবাহনে উঠানামা পরিহার করতে যাত্রী সাধারণ তথা নগরবাসীকে সচেতব হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি৷
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত