বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া। আমাদেরও প্রত্যাশা এই কাজটি যত দ্রুত সম্ভব- সেটি করুন। আর সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হলে আমাদের প্রধান ও জরুরি কাজ হবে- দেশ পুনর্গঠন করা।’
আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা যেমন দলকে পুনর্গঠন করবো, আসুন শপথ নিই, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে আমাদের প্রথম কাজ হবে প্রিয় মাতৃভূমিকে পুনর্গঠন করা। দেশের সব কাঠামোকে আমাদের মেরামত করতে হবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের সফল আন্দোলন সংগ্রামের ফসল জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খুনি-লুটেরা স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ওই সরকার অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যারা তার সম্পদ লুটতরাজের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছিল, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছিল, কথা বলার অধিকারের কথা বলেছিল- তাদের অনেক ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজ অনেকেই সংস্কারের ভালো ভালো কথা বলছেন, বলতেই পারেন। কেননা আপনারা দেশ ও দেশের কল্যাণ নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাদের পার্থক্য হচ্ছে- অন্যরা আজ যে সংস্কারের কথা বলছেন, বিএনপি সেই সংস্কারের কথা আজ থেকে আড়াই বছর আগে ৩১ দফার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছে। স্বৈরাচার যখন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শত শত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গুম-খুনের মাধ্যমে অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, সেই সময় তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাদের বলেছে, তোমরা দেশকে ধ্বংস করেছো, আমরা দেশকে পুনর্গঠন করবো। আজ অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে সংস্কারের সুন্দর সুন্দর কথা শোনা গেলেও সেদিন তাদের কাছ থেকে সংস্কারের কোনও কথা শুনতে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। কোটির কাছাকাছি বেকারদের কর্মসংস্থান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচি আবার চালু করা। এর মাধ্যমে কৃষকের সেচের পানির ব্যবস্থা করা। শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিলে যাতে আবারও পানিপ্রবাহ শুরু হয়। আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে একটি দৃঢ় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে শিক্ষার সুযোগ তাদের কাছে পৌঁছে যায়। নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, যাতে তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পায়। এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, যাতে চিকিৎসাসেবা নিতে আর কাউকে বিদেশে যেতে না হয়। দেশে থেকেই যেন তারা স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।’
বিএনপি একটি বিশাল দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে ১৬১৬ জন কাউন্সিলর, এদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যাদের বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেয়নি। দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে ওইরকম মিথ্যা ও গায়েবি মামলা রয়েছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।