অ্যা্টর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন,বিচারকরা জামিনের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন। তাদেরকে মামলার নথির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে সেই নথির কথায় শেষ নয়। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। কোনোক্রমেই যেন জুলাই বিপ্লবের বিরোধীতাকারী কোন আসামী আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। বার ও বেঞ্চ এক হয়ে ৫ আগষ্ট পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মানে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
শনিবার দিনব্যাপী যশোর পিটিআই স্কুল অডিটোরিয়ামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর (এ্যাটর্নি জেনারেল, আইসিটি) তাজুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) সহ খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার পুলিশ সুপারবৃন্দ, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, জেলা ও দায়রা জজবৃন্দ, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটবৃন্দ, সকল জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরবৃন্দসহ প্রশাসন ও বিচার বিভাগের উর্ধ্বতন ৩ শতাধিক কর্মকর্তাবৃন্দ এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সরকার দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। এই দেশের বিচার ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল।বিচারের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা হযেছিল। দেশে আয়নাঘর তৈরী করে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্য একটি দেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল। পুলিশকে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ভেতরে আয়নাঘর তৈরী করা হয়েছিলো, বাংলাদেশের নিরাপত্তার মধ্যে অন্য একটি রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ঢুকে পড়েছিলো। কিভাবে তারা এই দেশকে শাসন আর শোষণ করেছে তা গোটা জাতি দেখেছে। জাতি এই অবস্থা আর দেখতে চায় না।
বিচারকদের উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথি বলেন, মাননীয় বিচারকগণ, আপনাদের প্রো এ্যাকটিভ হয়ে বিচারকার্য চালাতে হবে। নতুন করে জুরিস ফুটেজ তৈরী করে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে বিচার কাজ চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন দেশ আমরা পেয়েছি সে অর্জন যেন কোনভাবেই বৃথা না যায়।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আর কোন ফ্যাসিষ্টটের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা দেখতে চাই না। আজ যারাই ফ্যাসিষ্টদের পক্ষ অবলম্বন করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে। যাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, খুন হয়েছে, গুম হয়েছে তাদের প্রতি কোন অনুকম্পা দেখানো চলবে না। নতুন বাংলাদেশে কোন ফ্যাসিবাদের স্থান হবে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে যাদের যাদের ভূমিকা ছিল তারা সবাই ফ্যাসিষ্ট। তাদেরকে বিচারের মুখামুখি করা হবেই। যারা এই জুলাই বিপ্লবকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে তারাই জাতির শত্রু।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, বন্দুকের ক্ষমতার জোরে গত ১৬ বছর ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, পুলিশী কাঠামো পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করেছে। তারা দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে কিভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল সে দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখেছে। দেশ আজ একটি যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যেই আছি। ফলে স্বাভাবিক ভাবে কোন কিছু নেওয়ার অবস্থায় আমরা নেই। আজ নতুন করে আমরা দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি। আমি দ্বিধাহীন কন্ঠে বলতে চাই, পুলিশের যে সকল আইজিপি, যে সকল ডিআইজি, যেসকল এসপি যে সকল ডিসি রাতের ভোটে সহায়তা করে দেশে ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, তারা যতই শক্তিশালী হোক তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি উপস্থিত সবাইকে সতর্কতার সাথে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে স্বস্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, আমাদের সন্তানরা বুকের রক্ত দিয়ে যে দেমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে, সেই দেশে নতুন করে কোন ফ্যাসিবাদ যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তার জন্য সকলকে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদের আমলে পুলিশ যেভাবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে গোটা জাতির কাছে গণশত্রুতে পরিণত হয়ে উঠেছিল সেই জায়গা থেকে ধীরে ধীরে বের হতে হবে।