গাজীপুরের শ্রীপুরের এমসি বাজারে প্রকাশ্যে মাথায় ও মুখে লাল গামছা পেঁচিয়ে রাম দা নিয়ে মহড়া এবং চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে ওই বাজারের ব্যবসায়ী হযরত আলী। রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার এবং একটি রাম দা উদ্ধার করেছে।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, এমসি বাজারে প্রকাশ্যে মাথায় ও মুখে লাল গামছা পেঁচিয়ে রাম দা নিয়ে মহড়া এবং চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও প্রধান অভিযুক্ত তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নূরুল ইসলাম নূরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু গ্রেফতার এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বলছেন গতকালের (শনিবার) ঘটনার পর এখনো পর্যন্ত পুলিশকে একটিবারের জন্যও তারা এমসি বাজারে তথা আশপাশের এলাকায় টহল দিতে দেখেননি। যেকোন সময় আবার জাহাঙ্গীর তার অনুসারীদের নিয়ে বাজারের দোকানে লুটপাট ও ব্যাবসায়ীদেরকে অস্ত্রের ভয় দিখেয়ে চাঁদা দাবী করতে পারেন।
মামলায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার হয়েছে। তারা হলেন উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ (মধ্যপাড়া) গ্রামের মৃত দুলাল উদ্দিনের ছেলে হাসেম (৩৯), আইনুুদ্দিনের ছেলে আসাদুল ইসলাম (২৪), মৃত ছমির উদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়া (২৮) এবং টেপিরবাড়ী (দেওচালা) গ্রামের মাইজ উদ্দিনের ছেলে হৃদয় হাসান রাকিব (২৬)। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ব্যবসায়ী হযরত আলী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী বাজারের ব্যবসায়ীদেরকে মারধর এবং লুটপাটের অভিযোগও করেন।
বহিস্কৃত যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু (৩৫) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের নূরুল ইসলাম নূরের ছেলে। সে শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ও বর্তমান সদস্য।
সরেজমিন দুপুর ১২ টায় এমসি বাজারের (ঢাকা-ময়মনসিংহ) মহাসড়কের পশ্চিম পাশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল (শনিবার) জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর নেতৃত্বে যেভাবে অস্ত্র নিয়ে দোকান থেকে চাঁদা দাবী করেছে তা তারা কখনো দেখেন নাই। এরকমভাবে গলায় দা ঠিকিয়ে চাঁদা নেওয়া এটাই প্রথম বলে তারা দাবী করেন।
ফল ব্যবসায়ী লিটন মিয়া (৬৫) বলেন, আমি এ বাজারে প্রায় ১৬ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। ঘটনার দিন আমি দোকানে ছিলাম না, আমার ছেলে দাকোনে ছিল। তারা আমার ছেলেকে গলায় দা ধরে তার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে যায়।
চা বিক্রেতা কুতুব উদ্দিন (৫৫) বলেন, ২১ বছর যাবত এ বাজারে ব্যবসা করছি। যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু যেভাবে রাম দা নিয়ে আমাদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিয়ে গেছে সেটা কখনো আমরা আশা করিনা। আমরা খাজনা দিয়ে আসছি এবং দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু এভাবে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে যাবে তা কোন ব্যবসায়ী মেনে নিবে না।
কসমেটিক্স ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৩০) বলেন, আমরা কখনো সন্ত্রাসকে পছন্দ করি না। যেভাবে আমাদের গলায় রাম দা ধরে টাকা আদায় করছে সেটা যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর একার পক্ষে সম্ভব না। অবশ্যই কোন না কোন নেতার প্রশ্রয়ে সে তার অনুসারীদের নিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা দাবী জানাই যেন প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায়নিয়ে আসা হোক।
এদিকে, হাতে রাম দা নিয়ে মাথায় ও মুখে লাল গামছা পেঁচিয়ে শতাধিক কিশোর ও যুবকের প্রকাশ্যে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যর ভিডিও মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মিছলের নেতৃত্ব দেয়া শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুকে দল থেকে তাৎক্ষনিক দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, রাতেই জাহাঙ্গীরের সহযোগী চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান আসামী জাহাঙ্গীরসহ তার অপর সহযোগীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।