রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫
দেশে ‘গণপিটুনিতে’ গত ছয় মাসে নিহত ১২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩:২৩ PM
চলতি সপ্তাহেই (গত মঙ্গলবার রাতে) ঘটে গণপিটুনির দুটি ঘটনা। একটি রাজধানীর উত্তরায়, অন্যটি রাজধানী লাগোয়া গাজীপুরের টঙ্গীতে। দুটি ঘটনাতেই ‘ছিনতাইকারী’ সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন দলবদ্ধ হয়ে পেটানো শুরু করেন।

উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করার পর পায়ে দড়ি বেঁধে পদচারী–সেতুর সঙ্গে তাদের উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এই ব্যক্তিরা হলেন মো. নাজিম (৪০) ও মো. বকুল (৩০)। রাত ১০টার দিকে উত্তরা হাউসবিল্ডিং এলাকার বিএনএস সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

রাজধানীর উত্তরার ঘটনায় কারও প্রাণ যায়নি। কিন্তু টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে নিহত ওই যুবকের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেনি পুলিশ। দুটি ঘটনাই বীভৎস। আর এসব ঘটনা বা পিটুনির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও দেওয়া হয়। 

উত্তরার ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন এক ব্যক্তিকে ওপরে তুলছেন। তার পায়ে দড়ি বাঁধা। তাকে পদচারী–সেতুর লোহার খুঁটির সঙ্গে উল্টো করে বাঁধছিলেন হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবক। আরও কয়েকজন ওই ব্যক্তিকে ওপরে তুলছিলেন। এই নির্বিচার গণপিটুনি এবং তাতে হত্যা বাড়ছেই। 

একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে বিগত ছয় মাসে এ ধরনের গণপিটুনির ঘটনা ও নিহত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্রকেই তুলে ধরে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা বাড়লেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন এসব ব্যক্তি।

সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (সাহার) বাংলাদেশ ব্যুরো সদস্য সাঈদ আহমেদ বলেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইন প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চিত্র তুলে ধরে। কয়েক বছর ধরেই এ আস্থাহীনতা বেড়েছে। তবে আস্থাহীনতার কথা বলে কোনো গণপিটুনিকেই সমর্থন করা যায় না। আস্থাহীনতা থাকলেও তা যথাযথ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ঠিক করা যায়, কিন্তু তা করা হয়নি। এর দায় সরকারের।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের (২০২৪) আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর। ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, গত ৫ আগস্টের পর ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সরকার তা বন্ধ করতে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। কখনো কখনো কাউকে জোর করে কোনো পদ থেকে নামিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে ‘মবের’ সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বেড়েছে এসব মবকেন্দ্রিক সহিংসতা বা গণপিটুনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সাইদুর রহমান বলেন, প্রথমত এটি ঘটছে পরিকল্পিত উসকানির কারণে। সরকারের সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কিছু ব্যক্তি এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটা বড় কারণ। হয়তো ইচ্ছা করেই এ বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতা ও কোনো পদক্ষেপ নিতে অনীহার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গণপিটুনির প্রবণতা।

উত্তরা ও টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনার সঙ্গে অপরাধ বেড়ে যাওয়া এবং মানুষের অতিষ্ঠ হয়ে পড়ার যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। পুলিশের তথ্য বলছে, ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ডাকাতি ও দস্যুতা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আরও বেড়েছে। 

দেশে গত জানুয়ারিতে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত