জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রমযান তাকওয়া অর্জনের মাস। বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস, আত্মার শুদ্ধিকরণের মাস। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাবেচা এ মাসে অনেক বেশি হয়। আর এর সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা ছলেবলে মানুষ ঠকানোর উৎসবে মেতে ওঠে। যা কখনোই একজন মুমিনের পরিচয় দেয় না। আবার ব্যবসায়ীরা যখন তাদের পণ্য বিক্রিতে মশগুল; অন্যরা শুধু পণ্য ক্রয়েই নয়, ফরজ ইবাদত ভুলে গিয়ে মার্কেট ও বিভিন্ন দোকানগুলোর পরিদর্শন ও প্রদক্ষিণে মগ্ন হয়ে পড়েন অনেকে। না ফরয নামাযের গুরুত্ব, না সুন্নত আদায়ের গুরুত্ব, না তারাবির নামাজের চিন্তা, না কুরআন মাজীদ পাঠের কদর। আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করে গুনাহ মাফের চেষ্টা করেন না অনেকে। এছাড়াও রয়েছে অশালীন চলাফেরা, যা রমযানের পবিত্রতাকে নষ্ট করে।
শুক্রবার (৭ মার্চ) খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে হোটেল সিটি ইন এ অনুষ্ঠিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে রমযান হলো পূর্বের সকল গুনাহর জন্য ক্ষমা চেয়ে সাচ্চা মুসলমান হয়ে জীবনযাপনের প্রতিজ্ঞা করার মাস। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা উচিত। ফরয নামায ও রোযা, ফরয নামাযের পাশাপাশি তারাবিহ পড়া, সেহরির আগে তাহাজ্জুদ পড়া, যথাসম্ভব জিকির ও কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে সময় কাটানো উচিত। সেই সাথে যথাসম্ভব দান সদকা করা, আশে-পাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হক আদায় করা বাঞ্ছনীয়। অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, অন্যের হক খাওয়া, সুদ ও জুয়াসহ সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে তো সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরয, রমযান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায়। কারণ, বরকতপূর্ণ সময়ের গুনাহর কাজ অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হয়ে পড়তে পারে। তাই আমরা সবসময় প্রার্থনা করি আমাদের সবার জীবনে যেন রমযানের গুরুত্ব ও ফজিলত সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যেসব মানুষ, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, তাদের সকলের ত্যাগ আল্লাহ পাক কবুল করুন এবং সবাইকে উপযুক্ত যা দান করুন। মুক্তি অর্জন করতে হলে অবশ্যই সংগ্রাম করতে হবে। বিনা সংগ্রামে কখনো মুক্তি আসে না। এ জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সকলকে ভুমিকা রাখার আহবান জানান।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, মাহে রমযানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত আমলকে আরো সুন্দর করতে হবে। খুলনা মহানগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছে দিতে হবে। সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকতে হবে। কুরআনের সমাজ কায়েমের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে হেফাজত করুন, নেক কাজের তৌফিক দেন, সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার দৃঢ়তা দেন। আমাদের ঈমানকে মজবুত করার সুযোগ দেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এতে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনার রশীদ খান, সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। কুরআন তেলাওয়াত করেন খুলনা মহানগরী ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দীক। ইফতার মাহফিলে মুসলিম উম্মাহ ও দেশ জাতির কল্যাণ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস।