সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
ঐতিহ্যের সাক্ষী ২৫০ বছরের প্রাচীন মাইসাহেবা জামে মসজিদ
মনিরুজ্জামান মনির, শেরপুর
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪১ PM
ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৫০ বছরের পুরনো প্রাচীনতম মসজিদ শেরপুরের মাইসাহেবা জামে মসজিদ। শহরের সরকারী কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত মসজিদটি তিনতলা বিশিষ্ট। 

এই মসজিদে প্রায়ই ১০ হাজার মুসুল্লি একসাথে নামায আদায় করা যায়। মসজিদটিতে প্রবেশে ২টি বড় গেইট ও বিশাল ২টি সুউচ্চ মিনার  রয়েছে যা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখা যায়। শহরে প্রবেশের পর এটি যে কারো দৃষ্টি কাড়ে মিনারের সৌন্দর্য-আভা।

এই মসজিদের নির্মাণ ইতিহাস থেকে জানা গেছে, শেরপুরের তৎকালীন তিনআনী জমিদার মুক্তাগাছার জমিদারকে দাওয়াত করেন। দাওয়াতে সাড়া দিয়ে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে একটি জায়গা চান সেখানে বিশ্রামের জন্য। আর সে সময় এ স্থানে খাজনা আদায় করার ঘরের পাশে আরেকটা ঘর ছিল যা মুক্তাগাছার জমিদারকে দেওয়ার জন্য তিনানী জমিদার মনস্থির করেন এবং হাতি দিয়ে ঘর ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু হাতিটি ঘর ভাঙ্গা জন্য বার বার চেষ্টা করলেও বার বার সালাম দিয়ে বসে পড়েন। 

এ খবর শুনে তিনআনীর জমিদার গিয়ে দেখতে পান ঘরের ভিতর একজন নারী আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন। জমিদার বিষয়টি বুঝতে পরে ক্ষমা চান এবং ফেরত যান। সেই ধর্মপ্রাণ নারীর নাম ছিল মাই সাহেবা। তার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে মসজিদ নির্মান করেন সেটা বর্তমান নাম মাইসাহেবা জামে মসজিদ নামে পরিচিত। মাইসাহেবা মৃত্যুর পর তার কবরও মসজিদের পাঙ্গণে রাখা হয়।

মসজিদের প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই এর তত্বাবধান করেন সালেমুন নেছা বিবি (জীবদ্দশা পর্যন্ত)।তার মৃত্যুর পর ভাগনে সৈয়দ আব্দুল আলীর উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। খোদার ধ্যানে সর্বদা মগ্ন ওই সালেমুন নেছাকে সবাই মা সাহেবা বলে সম্বোধন করতেন। ওই মা সাহেবা সম্বোধন করা থেকেই এর নামকরণ করা হয় মাইসাহেবা জামে মসজিদ।

২৫০ বছরের পুর্বে নির্মিত মসজিদটি সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকতায়নে কাজ করা হলেও তাতে ঐতিহ্যের ছাপ রক্ষা করা হয়েছে। এতে নিচতলা রয়েছে নামাজের ব্যবস্থা ও অযুর ব্যবস্থা। দোতলায় নামাযের ব্যবস্থা ও ধর্মীয় পাঠাগার এবং হজুরখানা বা মুয়াজ্জিন কক্ষ রয়েছে। তিনতলায় রয়েছে নামাজের ব্যবস্থা। মসজিদে মহিলাদেরও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদটি সম্পূর্ণ শীততাপনিয়ন্ত্রিত। দূর দুরান্ত থেকে নামাজ পড়ার জন্য ধর্মীয় মুসুলমানরা ছুটে আসেন। মসজিদে বয়স্কদের বিনামূল্যে কুরআন শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রয়েছে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং দুই জন নিরাপত্তা কর্মী। একজন মসজিদ কর্তৃপক্ষের আরেকজন পৌর কর্তৃপক্ষের। প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়ার জন্য ও মসজিদ দেখার জন্য দেশী বিদেশি পর্যটক ও ধর্মপ্রাণ মানুষজন ছুটে আসেন।

লোকমুখে শোনা যায় মাইসাহেবার নামে কিছু মান্নত বা দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। তাই মসজিদের দানবাক্সে দিনমজুর থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী, ভিক্ষুকসহ নানা শ্রেণীর পেশার মানুষ এখানে দান করে তৃপ্তিবোধ করেন। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এখানে দান করেন নিয়মিত। বিশেষ করে শেরপুরে যানবাহন চালক- মালিকরা দিনের শুরুতে এবং শেষভাগে নিয়মিত দান করেন। এছাড়াও মসজিদের নামে বিভিন্ন যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এ মসজিদে রমজানের সময় ৪ থেকে ৫ শত জন মুসল্লী ইফতার করে থাকেন। ইফতারের খরচ মসজিদ কমিটির লোকজন এবং জেলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অর্থায়নে করা হয়ে থাকে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত