রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়ক ঢালাইয়ের সময় ভিডিও করায় যুবককে মারধর করেছেন ইউনিয়ন যুবদলের দুই নেতা। গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার রেজাউল করিম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। মাইজবাড়ি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এসহাক ও সাধারণ সম্পাদক আলীমের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
সওজ (সড়ক ও জনপথ) সূত্রে জানা যায়, ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ি এলাকায় এডিবি প্রকল্পের ৩০০ মিটার একটি সড়ক নির্মাণের কাজের দায়িত্ব পান গোপালপুর উপজেলার আলমনগর এলাকার ঠিকাদার মোতালেব হোসেন দুলাল। নির্মাণাধীন সড়কটি স্থানীয় যুবদল নেতা ইসহাক ও আলীমের সহায়তায় রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে ঢালাই দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে যুবদল নেতারা ক্ষুব্ধ হন। ভিডিও ধারণ করায় রেজাউলকে মারধর ও স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন যুবদল নেতারা।
এলাকাবাসী জানায়, ৪ ইঞ্চি ঢালাই করার কথা থাকলেও করা হচ্ছিল দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার প্রতিবাদ জানালে ঠিকাদারের লোকজনসহ এসহাক ও আলীম তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় তারা রেজাউলকে মারধর করে এবং সেই রাস্তার ঢালাইয়ে ফেলে দিয়ে তাকেসহ ঢালাই করার হুমকিও দেয়। পরে রাতেই তাঁরা ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা পপি খাতুনকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবগত করেন।
এদিকে এ ঘটনার একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাড়াহুড়া করে সড়কের ঢালাই করছিলেন ঠিকাদারের লোকজন। সেটির ভিডিও করতে গেলে 'তুই কীসের ভিডিও করস' বলেই তার ওপর হামলা চালানো হয়।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবাদকারীদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন ঠিকাদারের লোকজন।
অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা ইসহাক সরকার বলেন, তেমন কিছুই হয়নি। একটু জোরে জোরে কথা কাটাকাটি হইছে তাই ভাবছে মারামারি। আসলে কিছু হয়নি।
ফলদা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে মোবাইলে কল করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং পরে আর ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া ঠিকাদার মোতালেব হোসেন দুলালকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু বলেন, যে কাজটি হচ্ছে, সেটা যথাযথ হোক এটাই কাম্য। আর রাতে ঢালাই দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই, এহেন কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানাই।
এসময় যুবদল নেতার নেতৃত্বে এক যুবককে মারধরের বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া এ ঘটনায় উপজেলা যুবদলের একাধিক নেতাকে কল দেওয়া হলেও তাঁরা গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা পপি খাতুন জানান, খবর পেয়ে আমি সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রাতের আঁধারে কাজটি ভালো করেনি। সেখানে কিছু নিম্নমানের উপকরণ আছে। নির্ধারিত সময় এবং নিয়মানুযায়ী কাজ না করলে ওই ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না সেইসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় রাখা হবে।