শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ৬ বৈশাখ ১৪৩২
শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন বাকৃবির অধ্যাপক
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ৩:০১ PM
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট নির্মাণের অনিয়মের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন। 

প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় আমার একটি গবেষণা নিয়ে প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর ও অসম্পূর্ণ খবর আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটির হেডলাইন ও ভিতরে এমন কিছু শব্দ চয়ন করা হয়েছে যাতে প্রতীয়মান হয় যে এ সম্পর্কে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হেডলাইনে বলা হয়েছে "অস্তিত্বহীন প্লান্ট নিয়ে গবেষণা" কিন্তু বাস্তবে পোল্ট্রি ফার্মে এ ধরণের একটি স্থাপনার অস্তিত্ব রয়েছে যার কার্যক্রম শেষের পথে। 

ড. ইলিয়াস তার গবেষণা বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, প্রসেসিং প্ল্যান্টটি গবেষণার কোন অংশ নয় তবে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি গবেষণা রয়েছে যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এ গবেষণা থেকে একজন ছাত্র এম এস ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। 

তিনি আরো বলেন, খবরটিতে আমার ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে যা আমাকে গভীরভাবে আহত করেছে। এ ধরণের একটি খবর প্রকাশের পূর্বে সরাসরি আমার কোন সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকতার মত মহান পেশায় যুক্ত আছি বিধায় এ ধরনের অসম্পূর্ণ তথ্য ও ছবি সংযোগের ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি।

গবেষণাটির কার্যক্রম সম্পর্কে অধ্যাপক  ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) কর্তৃক পরিচালিত ২ বৎসর মেয়াদি প্রকল্প। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ছিল ময়মনসিংহ ও এর আশেপাশের পোল্ট্রি বাজারসমূহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, বায়োসিকিউরিটি এবং পোল্ট্রি জবাইকরণ সম্পর্কে বিক্রেতাদের মনোভাব যাচাইকরণ। একটি সার্ভের মাধ্যমে গবেষণার এ অংশটি সম্পন্ন হয়। পরবর্তিতে এ বাজারসমূহ হতে সাধারণভাবে জবাইকৃত এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মুরগির মাংস ও ব্যবহৃত পানির নমুনা সংগ্রহ করে বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন ল্যাবে মাইক্রোবিয়াল বিশ্লেষণ করা হয়। এই গবেষণা দিয়ে ইতোমধ্যে ১ জন ছাত্র এম এস থিসিস সম্পন্ন করেছেন এবং গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারিতে ১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনারে গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে যা দেশি-বিদেশি গবেষকদের প্রশংসা অর্জন করেছে।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের আরও একটি অংশ ছিল বাকৃবি পোল্ট্রি ফার্মের একটি রুমকে সংস্কার করে প্রসেসিং ইউনিট করা এবং এর মাধ্যমে বাকৃবি কমিউনিটি এবং আশপাশের এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মুরগির মাংস সরবরাহ করা। পোল্ট্রি ফার্মের ১টি রুমে প্রসেসিং এর কাজ শুরু হলেও বিভাগীয় শিক্ষকদের ৩৭০ তম সভায় প্রসেসিং ইউনিটটি অফিস বিল্ডিং এর পাশে নতুন করে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী দ্বারা নকশা প্রস্তুত করে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময়ে পোল্ট্রি ফার্মের ভিতরে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন ৪টি শেড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং বায়োসিকিউরিটি ও দীর্ঘমেয়াদি স্থাপনা তৈরীর গুরুত্ব বিবেচনায় স্থাপনাটি পোল্ট্রি ফার্মের পুকুরের পার্শ্বে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের ৩৮২ তম সভায় বিভাগের সকল শিক্ষক সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করে কাজটি এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 

পোল্ট্রি প্রসেসিং ইউনিট স্থানান্তর ও অধিকতর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান এবং কার্যক্রম তদারকির জন্য বিভাগীয় ৩৮৩ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভাগীয় প্রধানকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। মনিটরিং কমিটির সভায় প্রসেসিং ইউনিটটির মাধ্যমে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বিধায় এর গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউনিটটির কলেবরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা, একতলা স্থাপনাটি দ্বিতল ফাউন্ডেশনসহ মজবুত করে তৈরী করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

বাজেট বিভাজন পর্যালোচনা করে দেখা যায় পুকুর উন্নয়ন, প্রসেসিং ইউনিট এর আয়তন বৃদ্ধি, স্থাপনার নকশা পরিবর্তনের কারণে বাজেট প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রকল্পের বাজেট স্বল্প হওয়ায় পোল্ট্রি ফার্ম এবং পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করার মাধ্যমে ধাপে ধাপে এটি সম্পন্ন করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। কমিটির তত্ত্বাবধায়নে কাজটি শুরু হলেও বর্ষাকাল, পুকুরের পানি সরানো, মাটি ভরাটসহ টেকনিক্যাল কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয় তবে বর্তমানে কাজের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্রুত কাজটি শেষ হবে বলে কমিটি আশা করছে।

এছাড়া এই বিষয়ে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও একটি প্রতিবাদ লিপি দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবাদ লিপিতে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বাপন দে বলেন, প্রকল্পটির আর্থিক বিষয়াবলী বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাউরেসের আর্থিক বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ক্রয় কমিটির মাধ্যমে স্বচ্ছতার সহিত সম্পন্ন হয়েছে। প্রসেসিং প্লান্টটি প্রথমে ফার্মের একটি জায়গায় তৈরীর কাজ শুরু হলেও পরবর্তীতে ফার্মের অফিস বিল্ডিং এর পাশে নতুন করে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী দ্বারা নির্মাণ কার্যক্রমের নকশা প্রস্তুত করে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়। 

অধ্যাপক বাপন আরো বলেন, পরবর্তীতে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগীয় পাঠ্যপর্ষদের সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে ফার্মের বায়োসিকিউরিটি রক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থাপনা তৈরীর গুরুত্ব বিবেচনায় ফার্মের পুকুরের পার্শ্বে ইউনিটটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দ সরেজমিনে নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করে কাজটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন এবং নির্মাণ কার্যক্রমটি তদারকি, মনিটরিং ও অধিকতর উন্নয়নের জন্য একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।

পরবর্তীতে, প্রসেসিং ইউনিটটির আয়তন বৃদ্ধি, স্থাপনার নকশা পরিবর্তনের কারণে বাজেট স্বল্পতা, বর্ষাকালে পুকুরের পানি সেচের মাধ্যমে মাটি ভরাটকরণে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরী এবং সর্বোপরি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে মনিটরিং কমিটির সদস্যবৃন্দ অধিকতর ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নির্মাণ কার্যক্রমটি কিছুটা বিলম্বিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রসেসিং ইউনিট-টির নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে এবং অতি শীঘ্রই প্রসেসিং ইউনিটটির নির্মাণ কার্যক্রম সমাপ্তি করে শিক্ষা ও গবেষণার কাজ শুরু করার ব্যাপারে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত