চলছে পবিত্র মাহে রমজান। আর কয়দিন পরেই মুসলমানদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ আর এ আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় নতুন পোশাক। ঈদকে সামনে রেখে পোশাক তৈরির কারিগরদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। রোজার পূর্বে থেকেই অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে দর্জি কারিগররা। তবে মজুরি কম হওয়ায় পেশা বদলাচ্ছেন কারিগররা।
নড়াইল জেলা শহরের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেলোয়ার কামিজ, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবী, তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। তাদের এই কর্মযজ্ঞ শুধু সামনের ঈদকে ঘিরে। বাকি মাসগুলো কাজ কম থাকায় কারখানায় শুয়ে বসে সময় পার করতে হয় তাদের। পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি কম হওয়ায় অনেকেই পেশা বদল করছেন। কেউ কেউ চলে গেছে বিদেশে। মালিকদের কাছে অনেকটা অসহায় তারা। কিছু কারিগর দারিদ্র্যের কারণে টেইলার্স মালিকদের কাছ থেকে আগে থেকেই টাকা ঋণ নেয়। সঠিক সময় সেটি ফেরত দিতে পারে না। যার ফলে অন্য কোন দোকানে যেতে পারে না। নিরুপায় হয়ে তাদের সেই মালিকের কারখানায় কাজ করতে হয়। পোশাক তৈরির দাম বাড়লে ও আমাদের শ্রমের মূল্য বাড়ানো হয়নি।
দর্জি কারিগর আমিন মোল্যা বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন,‘আমরা প্রচুর পরিশ্রম করি। কিন্তু পারিশ্রমিক কম। যে টাকা আয় হয় তা সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়। মজুরি কম হওয়ায় অনেক শ্রমিক এ পেশায় আসতে চান না।’
দর্জি কারিগর শিপুল কুন্ডু বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘১২ বছর ধরে দর্জি কাজ করছি। দিনে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতে আমাদের সংসার চলে না। তাও করতে হয় কারণ এ কাজটা আমরা শিখে ফেলেছি। ঘর ভাড়া আছে সেই সাথে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এ কাজ কেউ আর করতে চায় না এতে আয় কম।’
বড়েন্দার গ্রামের সুমন মজুমদার বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, ‘আমাদের গ্রামে অনেক রাজমিস্ত্রী আছে। আমাদের তুলনায় তাদের কষ্ট অনেক কম আবার মজুরি বেশি। ভাল আছে তারা কিন্তু আমরা পিছিয়ে রয়েছি।একটি প্যান্টের মজুরি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সেখানে আমরা পাচ্ছি ১৮০ থেকে ২২৫ টাকা। শার্ট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আমরা পাচ্ছি ১৩৫ থেকে ১৪৫টাকা। থ্রি-পিস ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সেখানে আমরা পাই ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। পাঞ্জাবি ৪৫০ থেকে ৫০০, আমরা পাই ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। মজুরি কম হওয়ায় অনেকে পেশা বদল করছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে যাচ্ছেন।’
দর্জি মালিক সমিতির সভাপতি ও রেক্স টেইলার্সের মালিক সুজিত মজুমদার বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘একটা প্যান্ট কাটালে তাদের আমরা ২২৫ টাকা দিচ্ছি। দিনে ৩ টা প্যান্ট কাটতে পারলে তো তাদের মুজুরী যা হচ্ছে তা অসুবিধা হওয়ার কথা না। আমাদের নিজেদের ঘর ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে তেমন লাভ হয় না।,
নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ ব্যবস্থাপক,প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘জেলার দর্জি কারিগরদের আমরা প্রশিক্ষণ,ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা সহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে থাকি। এই শিল্পকে ধরে রাখতে বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে