ধানমন্ডিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)।
তিনি জানান, রাজধানীর ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ভিকারুন্নেসা স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে তার বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।
গত বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে অভিযুক্ত ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে গেইটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের র্যাব পরিচয় দিয়ে বলে, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা কটি পরা ছিল। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে ওঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

তারা নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এসময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসে। ডাকাতরা তখন তাদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। তারপর জোর করে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
তিনি আরও জানান, চক্রটির আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক ২ দশমিক ৫ ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে। তখন ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে ডাকাতদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। এসময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন।
তখন আশেপাশে থাকা মানুষের সহায়তায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় এদিনই বুধবার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও মালিকের ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার আসামিরাসহ পলাতক আটজন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।
পরে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।