ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়ে নিজেরাই হাতে বানিয়ে সুতোয় ঝুলিয়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ঈদকার্ড বিক্রি করছে। রাত জেগে ঈদকার্ড তৈরির পর বিকেলে সেসব কার্ড বিক্রি করে অর্থ হাতে পাওয়ার পর ঈদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যেত... নব্বইয়ের দশকে যাদের জন্ম তাদের শৈশবের প্রায় সবারই ঈদের স্মৃতি অনেকটা এমন।
সময়ের পরিক্রমায় এরপর প্রচলন হয় প্রেসে ছাপানো ঈদকার্ডের। এসব ঈদকার্ডের মধ্যে শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গে বড় করে লেখা থাকতো “ঈদ মোবারক”।
এছাড়াও থাকতো প্রাকৃতিক দৃশ্য, পাখি, মসজিদের গম্বুজ, মক্কা শরীফের ছবি ইত্যাদি। কার্ডের মধ্যে গম্বুজওয়ালা মসজিদের ওপরে থাকতো ঈদের স্মারক চাঁদ আর তারা আঁকা। অথবা এক তোড়া লাল গোলাপের মাঝখানে লেখা “ঈদ মোবারক”।
ঈদকে সামনে রেখে শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ছিল এসব ঈদকার্ডের রমরমা ব্যবসা। এরপর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় হাতে বানানো ঈদ কার্ডের প্রচলন। এখন আর আগের মতো স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে বন্ধু আর আত্মীয়স্বজনের জন্য ঈদকার্ড কিনতে আসে না।
কার্ড ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের দিকেও ছাপা কার্ড বিতরণের হিরিক থাকলেও এখন প্রযুক্তির যুগে এসে ছাপা কার্ড বিতরণে আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে কার্ড বানিয়ে ই-মেইল কিংবা ফেসবুকে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন মানুষ। ফলে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়ার যে কালচার সেটি হারিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা নববর্ষের ক্ষেত্রেও।
কার্ডের মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে কেন্দ্রে করে নেই কোনো বাড়তি ব্যস্ততা। উল্টো অন্য সময়ের তুলনায় ফাঁকা দোকানগুলো। কয়েকজন কার্ডের কাজ করলেও তা বিয়ের কার্ড। ঈদের কার্ডের অর্ডার নেই বললেই চলে। তাই ঈদ কার্ড কেন্দ্রিক ব্যবসা এখন আর নেই আজাদ প্রোডাক্ট, আইডিয়াল প্রোডাক্টসসহ স্বনামধন্য কার্ডের দোকানগুলোতে।
আজাদ প্রোডাক্টসের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন তো ঈদ কার্ড বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কম। আগে রমজানের আগেই প্রস্তুতি নিতাম ঈদ কার্ড ছাপানো জন্য। শত শত ডিজাইন থাকতো আমাদের ঈদ কার্ডের জন্য। তখন সবচেয়ে বেশি চলতো ঈদ কার্ড, বাচ্চাদের কার্ড ছিল। এগুলো এখন জিরোতে নেমে আসছে। এবছর তো কোনো কার্ডেই চলছে না। মোবাইল আসার পর থেকে ধীরে ধীরে কার্ড বিক্রি কমেছে। এখন তো একেবারে তলানিতে এসে পড়েছে। ২০১৫-১৬ সালেও লোকজন লাইন দাঁড়িয়ে কার্ড কিনেছে। এখন তো নববর্ষের কার্ডও চলে না। আমাদের কার্ড বিক্রির দু’টি সিজনই ছিল, একটি নববর্ষ আরেকটি ঈদ। এখন তো কিছুই নেই। আমাদের আগে চাঁদরাত পর্যন্ত শোরুম খোলা রাখতে হতো, লাখ লাখ কার্ড বিক্রি হতো।’

আইডিয়াল প্রোডাক্টসের ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মোবাইলের কারণে ঈদ কার্ড অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কার্ড করতো। এখন সেই কার্ড বিতরণটা সেভাবে করছে না। শুধু ঈদ কার্ড নয়, নববর্ষের কার্ডও এখন সেভাবে বিতরণ হয় না। এক সময় এলাকায় এলাকায় ছেলেরা কার্ড বিক্রি করতো, তারা আমাদের এখানে এসে লাইন দিয়ে কার্ড নিতো। ২০১৫-১৬ সালের দিকেও ছিল। তখন এমন হতো আমরা টিকিট দিতাম, সিরিয়াল অনুযায়ী তারা এসে যার যেটা পছন্দ সেই কার্ডগুলো নিতো। দীর্ঘ লাইন লেগে যেতো। সেই সময়টা এখন আর নেই।’