ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে শত্রুতার জেরে রাতের আধারে আগাছা নাশক বিষ দিয়ে কৃষকের বোরো ধান ক্ষেত নষ্ট করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুরো ধান ক্ষেত আগুনে পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েগেছে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। এলাকায় অন্যান্য কৃষকদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নয়াপাড়া গ্রামে আলাল উদ্দিনের ছেলে কৃষক মোস্তফা আকন্দ পৈত্তিক সূত্রে পাওয়া ৪০ শতাংশ জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করেন। ফসলও অনেক ভালো হয়। কয়েকদিন পরেই পাকা ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখতে ছিলেন কৃষক আব্দুল হাকিম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জায়গাজমি নিয়ে তাদেরসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মজ শেখের ছেলে সেকান্দর আলীর শত্রুতা চলে আসছিল। বিগত সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই ক্ষেতসহ এলাকা আরও কয়েকজনের জমি জোর করে দখল করে রাখে সেকান্দর।
পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিক শালিস বৈঠক করে অবৈধ দখলদার সেকান্দরকে জমি থেকে বিতারিত করে। এর পরও সেকান্দর আলী নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। ইতোপূর্বে অন্য এক কৃষকের জমির ধানও সেকান্দর আলী জোর করে কেটে নিয়েছিল পরে পুলিশ এসে সেই ধান প্রকৃত মালিককে ফেরত দেয়। জমি দখলের লক্ষেই বুধবার রাতের কোনো সময় সেকান্দর আলী গোপনে মোস্তফা আকন্দের জমিতে আগাছা নাশক বিষ প্রয়োগ করে পুরো ক্ষেত পুড়িয়ে দিয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন জমির মালিক মোস্তফা আকন্দ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ বোরো ফসল এখন পুড়ে হলদে হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন আগুনে পুড়ানো হয়েছে। কৃষক মোস্তফা আকন্দ বলেন, তার পৈত্তিক সম্পত্তিতে বছরের পর বছর ধরে কৃষি ফসল করে আসছেন। গত এক বছর আগে হঠাৎ করেই এ জমি একই গ্রামের সেকান্দর আলী তার নিজের বলে দাবি করে বসে। এ নিয়ে গ্রামে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে গ্রাম্য শালিস হয়েছে। শালিসে তার পক্ষেই রায় দিয়ে গ্রামবাসী। এর পরও তার পিছে লেগে রয়েছে জমি দখলে নিতে। বুধবার রাতে ক্ষেত দখলে নিতে তার থোড় ধানে আগাছা নাশক বিষ প্রয়োগ করে সর্বনাশ করে দিয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
তবে আগাছা নাশক বিষ প্রয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করে সেকান্দর বলেন, কে বা কারা এ কাজ করেছে তার বিষয়টি জানা নেই। এছাড়া আরওয়ারমূলে ওই জমির মালিকানাও দাবী করেন তিনি।
গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন, আব্দুল হাকিমসহ আরও কয়েকজন কৃষক বলেন, সেকান্দের কাজই হলো মানুষের জমি দখল করা। এর আগেও একাধিক ব্যক্তির জমি দখল করেছে। এবার সহজ সরল মোস্তফার জমি দখলে নেওয়ার জন্য রাতের অন্ধকারে আগাছা নাশক বিষ প্রয়োগ করে বোরো ফসল পুড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তাগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিনা পারভীন বলেন, পরস্পর শুত্রুতা থাকতে পারে কিন্ত তাই বলে আবাদকৃত বোরো ফসল পুড়িয়ে দিতে পারে না। যে এই কাজ করেছে, চরম অন্যায় করেছে। খবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই কৃষি অফিসার।
মুক্তাগাছা থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, এ ধরণের একটি ঘটনার কথা শুনেছেন। তবে কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।