আপন চাচার একাধিকবার ধর্ষণের শিকার এক শিশু প্রসুতি (১৩) নবজাতক পূত্রের জন্ম দিয়েছেন। অনেক দেরিতে হলেও এ ঘটনায় অভিযুক্ত চাচা উদয় কর্মকারকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে শিশুর বাবা তার আপন ছোট ভাই উদয় কর্মকারকে একমাত্র এজাহার নামীয় আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন জানান, শিশু ধর্ষণের অভিযোগে উদয় কর্মকার নামের যুবককে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলেই আদালতে সৌপর্দ করা হলে আদালতে তাকে কারাগারে পাঠান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে ওই শিশু প্রসুতি প্রসব বেদনা নিয়ে ২৫০ বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেদিন দুপুরে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে নবজাতক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন শিশু প্রসুতি।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, প্রথমে রোগীর লোকজন সবকিছু গোপন করে ভুক্তভোগী প্রসুতি শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই ওই প্রসুতি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। কিন্তু ওই দিনই রোগীর লোকজন গোপনে রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে তারা পালিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়াতে আবার তারা হাসপাতালে ফিরে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকাতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২ মে গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন উদয় কর্মকার সকলের আড়ালে বড় ভাইয়ের শিশু কন্যার শোবার কক্ষে প্রবেশ করে মুখ চেপে ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর ৩ মাস পেরিয়ে শিশুটির দৈহিক পরিবর্তন চোখে পড়লে শিশুটির পরিবার শহরের ওই বাসাটি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র একটি বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শিশুটি তার বাবা-মাকে জানায়, আসামি (চাচা) প্রথম দিনের ঘটনার পরে আরও একাধিকবার ভয়ভীতি দেখিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। শিশুটি ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, আসামি তার আপন ভাইয়ের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। তবে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমঝোতার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সমঝোতায় সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ তাদের। তারা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বলেন, এটা একটা পারিবারিক অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা সমঝোতা করে নিচ্ছি। নিজেদের ব্যাপার এ জন্য পুলিশের মাধ্যমে সমঝোতা করে নিচ্ছি। এ নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাচ্ছি না।
সমঝোতায় সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নার্গিস খাতুন বলেন, শিশু ধর্ষণের অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী শিশুটির পিতার করা মামলায় একমাত্র এজাহার নামীয় আসামি উদয় কর্মকারকে ওই দিনই গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে পর্যায়ক্রমে আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ, ডিএনএ টেস্ট করা হবর। আর্থিক সুবিধা নিয়ে সমঝোতার সহযোগিতা করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।