গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় হঠাৎ করেই বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রপ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। গত এক সপ্তাহে শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আক্রান্তদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য টংঙ্গী, গাজীপুর সদর ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্তদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে প্রতিষেধক সংগ্রহ করে আনলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মূল্যে প্রতিষেধক বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
কালীগঞ্জের দুর্বাটি গ্রামের মোখলেস উদ্দিন জানান, গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে তার দুই বছরের শিশু মাশরিফ বাড়ির উঠোনে খেলা করছিল। হঠাৎ একটি বেওয়ারিশ কুকুর এসে শিশুটিকে এলোপাতাড়ি কামড়ায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে জানা যায়, সেখানে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক নেই। পরে শিশুটিকে গাজীপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
একই গ্রামের বাসিন্দা জমির হোসেন ও ফুল মেহার জানান, ১৬ এপ্রিল দিনে-দুপুরে তারা বেওয়ারিশ কুকুরের হামলার শিকার হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কালীগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের সাতটি ইউনিয়নে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুরের দল। পথচারী, যানবাহন চালক এমনকি শিক্ষার্থীরাও কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। আতঙ্কে অনেক শিশু বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের জানান, এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে আইনি বাধা থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আগে কুকুর ধরার প্রকল্প ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজওয়ানা রশীদ বলেন, “বর্তমানে ডগ ভ্যাকসিন সরকারিভাবে বন্ধ। তবে কাউকে কামড়ানোর পর দ্রুত সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে। আমাদের এখানে টিকা না থাকলেও বাইর থেকে এনে প্রয়োগ করা যায়।”
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, “প্রাণী অধিকার রক্ষায় কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে টিকা নিয়ে যদি কেউ হয়রানি হয় বা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম রাখে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”