কুমিল্লা নগরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার বিকালে এই অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় কুমিল্লা নগরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অস্ত্র হাতে তারা মিছিলও করে।
নগরীর রাণী দিঘির পাড়, তালপুকুরপাড়, আদালতপাড়া এলাকায় বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের এসব মহড়া হয়। এ সময় সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে, শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও শহরের আরও ২০টি উপকেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা চলছিল। রাণীর দিঘিরপাড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায়ও ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা চলাকালে দিঘির দক্ষিণপাড়ে দুই থেকে তিনশ কিশোর হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। তাদের মধ্যে সামনে নেতৃত্ব দেয় আরও ১৫-২০ টি মোটরসাইকেল। ওই মোটরসাইকেলগুলো বিকট আওয়াজে সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মহড়ার সময় রাণীরদিঘির পাড়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এ সময় ভিক্টোরিয়া কলেজের বাইরে রাণী দিঘিরপাড়ে অপেক্ষমাণ বিভিন্ন জেলা থেকে সন্তানদের নিয়ে আসা অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসা অভিভাবক করুণা রাণী সাহা বলেন, যে পরিস্থিতি দেখেছি তাতে মেয়ে যদি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়, তবু এখানে ভর্তি করাব কিনা তা দ্বিতীয়বার ভাবব।
তালপুকুপরপাড় এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিকালে এক থেকে দেড়শ কিশোর হাতে ছেনি, রামদা, চাপাতি নিয়ে আসে। পরে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে গোটা তালপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
আদালতপাড়া এলাকায় বিকালের পর কিশোর গ্যাং তাদের আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহড়া দেয়। এ সময় সড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকরা ভয়ে সড়কের পাশে অবস্থান নেন।
স্থানীয় এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘চুইট্টা চুইট্টা পোলাপাইন কী করে। এডির আতে ছেনি চাপাতি। কয়দিন পর পর এডি রাস্তার নামে। এডির বাপ-মা ডাক দেয় না। এল্লাই এডি এরুম অইছে। পুলিশ কিতা করে?’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে নামে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্ত্রসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। অভিযান চলছে। আমরা পুরো এলাকায় কঠোরভাবে নজরদারিতে রেখেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীতে কমপক্ষে বিশটি কিশোর গ্যাং তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে দুদিন পর পর শক্তির মহড়া দেয়। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান।