সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৫৫ দেশ ভ্রমণ
ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার
আনোয়ার বারী পিন্টু
প্রকাশ: সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২, ৪:২১ PM
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার। ১৫৫ তম দেশ তাজিকিস্তান ভ্রমনের মাধ্যমে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন নাজমুন নাহার। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করলেন নাজমুন বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে। নাজমুন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সাথে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে! তিনি ভ্রমণ করবেন বিশ্বের প্রতিটি দেশ।

স্বাধীন বাংলাদেশের এই লাল-সবুজের পতাকাকে বহন করার জন্য গত ২১ বছর ধরে নাজমুন পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে বাংলাদশের পতাকাকে তুলে ধরেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকেও তিনি বিশ্বের দরবারে তাঁর পৃথিবী অভিযাত্রার মাঝে তুলে ধরেছেন।

২০০০ সলে ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে 'ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁর প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। ১ জুন ২০১৮ সালে ১০০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর। ১৫০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকা মহাদেশের দেশ সাওতমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ। বিশ্বের দরবারে বাংলাদের পতাকা হাতে ইতিহাস গড়ছেন নাজমুন নাহার। বিশ্বের ১৫৫ দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক মাইলফলক হলো নাজমুন নাহারের।

তার বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে তবুও থামেনি তার পদযাত্রা, তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বিশ্ব অভিযাত্রার সাথে সাথে। বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন, বহু অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা  পেয়েছেন তিনি।

নাজমুন নাহার তাঁর এই বিরল কাজের জন্য তিনি পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা 'পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এ পর্যন্ত সারা বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে প্রায় লক্ষাধিক বাচ্চার সাথে তিনি বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে পরিচয় করিয়ে দেন! এছাড়াও পথে পথে তিনি স্কুল, কলেজ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছান! পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করেন তার বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে, এছাড়া বাল্য বিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিত করেন তার বিশ্বভ্রমণে অভিযাত্রার মাধ্যমে।

এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছেন, পিস রানার অ্যাওয়ার্ড, মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড, যুক্তরাজ্যে স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া তিনি পেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সম্মাননা উইমেন ওয়ারিয়র এওয়ার্ড, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ এওয়ার্ড অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা, গেম চেঞ্জার অব বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল উইমেন অব বাংলাদেশ, গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল সম্মাননা, জনটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, তিন বাংলা সম্মাননা ও রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড। জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়োনার কাছ থেকে ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি, সফল নারী সম্মাননা, লক্ষ্মী তারুণ্য সম্মাননাসহ দেশে-বিদেশে মোট পঞ্চাশটির মতো সম্মাননা পেয়েছেন।

নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন । এছাড়া তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে।

২১ বছর তিনি পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে চলেছেন বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্বদরবারে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ১৫৫ দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ ভ্রমণে সঙ্গী ছিলেন তাঁর মা। বাকি দেশগুলো তিনি একাই ভ্রমণ করেছেন। দিনের পর দিন সর্বোচ্চ টানা ৫৮ ঘণ্টা, কখনো ৪৮ ঘণ্টা, কখনো ৩৬ ঘণ্টা তাঁকে বাসে জার্নি করতে হয়েছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। টানা কখনো ১৫ দেশ, কখনো ১৪ দেশ তিনি তিন মাস, চার মাস, পাঁচ মাসের জন্য সড়কপথে এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন।

তিনি সুইডেনে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন ২০০৬ সালে। পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করতেন। সামারে তিনি ১৭–১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে পয়সা জমাতেন শুধু ভ্রমণ করার জন্য। কম খরচে থাকতেন পৃথিবীর বিভিন্ন ট্রাভেলার্স হোস্টেলে। কখনো তাঁবু করে, কখনো কোচ সার্ফিংয়ের মাধ্যমে।  স্বল্প খরচে পৃথিবী রহমান করার জন্য সড়ক পথে ভ্রমণ করতেন নাজমুন, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে জোন ভাগ করে করে একটানা ভ্রমণ করতেন। কোন দেশে ভ্রমণের পূর্বে তিনি সেই মহাদেশের ম্যাপ ও সেখানকার দর্শনীয় জায়গাগুলোর উপর গবেষণা করে নিতেন। সেখানকার পার্শ্ববর্তী রুটগুলো দেখে নিতেন কিভাবে কম খরচে সেখানে পৌঁছানো যায়।
একজন ইয়ূথ ও বাংলাদেশের পতাকা হাতে পিস রানার হিসাবে এই অভিযাত্রাকে ইতিহাসের সাক্ষী করে রাখার জন্য নিজ দেশের পতাকা বহন পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান পাচ্ছে।

সারা বিশ্বে নাজমুন নাহারের দেশাত্মবোধে জাগ্রত এই অভিযাত্রা পৃথিবীর পথে পথে বিশ্বমানবতার মাঝে আমাদেরকে আরো বেশি গর্বিত করছে। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অনেক মানুষ এসেছেন আলোকবর্তিকা হাতে আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে। নাজমুন আমাদের বাংলাদেশি এ প্রজন্মের একজন আলোকবর্তিকা নক্ষত্র মানুষ।

-বাবু/শোভা
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত