নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় অত্যাধিক তাপে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানির অভাবে আমন ধানের জমি ফেটে যাচ্ছে।
আগস্ট মাসে সাধারণত আমাদের দেশে বৃষ্টির পরিমান বেশি হয়ে থাকে। এই বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল এই মৌসুমের কৃষকরা। বর্তমানে বৃষ্টি না থাকায় মহা সংকটে পড়েছেন আমন ধান রোপনকারীরা।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার সান্দিকোনা, মাসকা, নপপাড়া, চিরাং, ইউনিয়নে কৃষকদের সাথে সরেজমিনে, কেন্দুয়া উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের ফসলের মাঠ ঘুরে রোপা আমন ধানের জমিতে এমন চিত্র চোখে পড়ে। অনাবৃষ্টির কারণের আমন ধান ফলানো কৃষকদের মাঝে হাহাকার পরিলক্ষিত হচ্ছে পাশাপাশি এখনও এমন অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে, যেখানে অত্যাধিক তাপে ও বৃষ্টির অভাবে জমির মাটি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, সেখানে শক্ত মাটিতে আমনের ধানের চারা রোপন করা যাচ্ছে না।
অনাবৃষ্টি ও অত্যাধিক তাপে জমিতে আমনের চারা না লাগাতে পারায়, কৃষকদের চোখে মুখে এখন চিন্তার ভাঁজ। চলতি মৌসুমে দেখা নেই বৃষ্টির। জমিতে পানি না থাকায় আমন ধান লাগাতে পারছেন না কৃষক। পানির অভাবে জমিতে রোপণ করা ধান গাছ মরে যাচ্ছে। জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। আমন ধান চাষ সম্পূর্ণ পানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার হাজারো কৃষক পাশাপাশি বৃষ্টিপাত না থাকায় প্রচন্ড দাবদাহসহ খরা আর অনাবৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন যেমন অতিষ্ঠ তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্যসহ ফসলের চাষাবাদ।
কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সাকি জানান, আমন ধানের মৌসুম শুরু থেকে তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। কিছু দিন আগে কিছু পরিমান বৃষ্টি হয়েছিল, সেই পানি থেকে নিচু অংশের জমিতে চারা রোপণ করেছিল। এখন পানির অভাবে রোপন করা সেই চারা গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত বৃষ্টির পানির উপরই ভরসা রাখছেন এই মৌসুমের কৃষকেরা।
উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে আমনের চারা রোপন করা প্রায় অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে সান্দিকোনা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের কৃষক মনজিল ভূইয়া বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাব এবং বিদ্যুৎের লোডশেডিং জনিত কারণে অত্যাধিক তাপে কৃষকদের জমি শুকিয়ে মাটি ফেটে যাওয়ায় জমিতে চারা রোপন নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা।
উপজেলা কান্দিউড়া, নওপাড়া, চিরাং ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায় ,এই চলতি মৌসুমে অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমির চারা গাছ বাঁচাতে ইঞ্জিল চালিত ও বিদ্যুৎ চালিত মেশিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে তাদের চাষাবাদ চালিয়ে নিচ্ছিলেন কিন্তু বিদ্যুৎের লোডশেডিং এর কারণে তৃনমুল পর্যায়ের কৃষকরা পড়ছেন বিপাকে। যখনই বিদ্যুৎ আসে তখনই ফসলি জমির আমনের চারা বাঁচাতে ইঞ্জিল চালিত ও বিদ্যুৎ চালিত মেশিনের মাধ্যমে জমিতে পানি সরবরাহ করে থাকেন। এতে করে তাদের খরচ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। আবার অনেকে বৃষ্টি অপেক্ষার দিন গুনছে।
এব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান কবীর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উপজেলায় আমন চাষের প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে চারা রোপন করা শেষ হয়েছে। অত্যাধিক তাপ ও বৃষ্টির অভাবে পানি সংকটের কারণে আমনের চারা রোপন করা যাচ্ছে না, এই প্রসঙ্গে তিনি কেন্দুয়া আটপাড়ার সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এবং কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগমের সাথে তৃনমুলের চাষীদের বাকী ২০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপনের ব্যাপারে বিদ্যুতের সরবরাহ প্রসঙ্গে কথা হয় এবং উনারা পল্লী বিদ্যুৎের ডিজিএম সাথে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এপ্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎের ডি জিএম মোঃ মজিবুর রহমান জানান, আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাই,ততটুকু সমহারে বন্টন করছি পাশাপাশি উপজেলা কৃষি চাহিদার কারণে আগামী ১০/১২ দিন তৃনমুলের কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমন চাষের চারা রোপনের জন্য বিদ্যুতের সাহায্যে ইন্জিনচালিত মোটরের মাধ্যমে পানি সরবরাহ তৃনমুলে দেওয়ার চেষ্টা করব।
এদের মধ্যে কৃষক শহীদ মিয়া, রফিক মিয়া, রহিম, আলম, সাজু তারা বলেন, বাজারে, জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেশি তাই এই চলতি মৌসুমে ধান আবাদ করে লোকসানে থাকতে হবে তাদের। একমাত্র বৃষ্টি আসলেই কৃষক হাসবে, জমিতে ফলবে সোনালী ফসল। এই অপেক্ষায় হাজারো কৃষক।
-বাবু/শোভা