মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
বৈধ সনদ ছাড়াই নেত্রকোনায় গড়ে উঠেছে অনেকের ক্লিনিক-হাসপাতাল
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২, ৩:০২ PM

নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল যাদের বেশিরভাগ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বৈধ কোনো সনদ নেই তারপরেও তারা নির্দ্বিধায় সরকারের নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখি রীতিমতো তাদের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এই প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কিভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা দেখার জন্য সোমবার ২৮ আগস্ট ২০২২ নেত্রকোনা জেলা শহরের মোক্তার পাড়া এলাকায় কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, তারা রীতিমতো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু দেখার কেউ নেই এ যেন এক আলাদিনের চেরাগ তারা তাদের কার্যক্রম তাদের ইচ্ছামতই করছেন কেউ কিছু বলতে গেলেই শুরু হয় ঝগড়া ও হাঙ্গামা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঝগড়া হাঙ্গামার পরিস্থিত দেখা গেছে জেলার কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিকে হয়েছে অনেকের সাথে ঝগড়া। নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জরায়ুর অস্ত্রোপচারের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ও করেন ওই প্রতিষ্ঠান গুলো। অস্ত্রোপচারের পর থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে অনেকের এমনটা ও দেখা গেছে অনেক সময়।

পরে এই বিষয় গুলো হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জানালে অস্ত্রোপচারের কোনো কাগজপত্র ছাড়াই রোগীকে পাঠিয়ে দেন অন্যান্য হাসপাতালে।

অনেক সময় দেখা গেছে ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা জানতে পারেন অস্ত্রোপচারের সময় ভুলবশত রোগীর মূত্রনালি কেটে অন্যত্র সেলাই করে দেওয়া হয়েছে, জানা গেছে এ সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। এইসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার জন্য অনেকেই তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলেন এসব ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো আমাদের মত সহজ সরল মানুষের যম, এমন ভুল চিকিৎসার বিচার দাবি করেছেন অনেক ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা।

এদিকে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল’ই নয়, এমন মানহীন ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে জেলার অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক-হাসপাতাল। এসবের কিছু প্রতিষ্ঠানের সনদ থাকলেও অনেকে আবেদনও করেনি। নাকের ডগায় বছরের পর বছর এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে গেলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

তবে দেশের সব অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও কেউ সেই নির্দেশনা ও নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে তাদের এই অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নেত্রকোনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ১০ টি উপজেলায় সব মিলিয়ে ২০৮টি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১২টি হাসপাতাল এবং ৪৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবেদন না করেই অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা, হচ্ছে অস্ত্রোপচারও। জেলায় মানহীন ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হচ্ছে ভুল। এ নিয়ে বিপাকে রোগীরা। শিকার হতে হচ্ছে ভুল চিকিৎসারও।

এ বিষয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা কথা বলতে রাজি নয়। অনেকেই বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ যে উদ্যোগটি নিয়েছে এটি আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম। যাদের লাইসেন্স নেই, মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ, সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। 

একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, নেত্রকোনায় অনেক সংগঠনের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত মাত্র কয়েকটি। অনেকের আবার লাইসেন্স নেওয়া আছে, কিন্তু মানসম্মত না, সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানাই আমরা। 

জেলায় বিভিন্ন ফোরামের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান গুলো সম্পূর্ণ নিয়মনীতি মেনে চলে কিনা- এমন প্রশ্নে এক সচেতন নাগরিক বলেন, সব শতভাগ মানসম্মত না। এসবের তালিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আছে। কোনটা কতটুকু মানসম্মত, কোনোটার লাইসেন্স নেই, কোনোটার নবায়ন হয়নি- স্বাস্থ্য বিভাগ ঠিকমতো এসবের তদারকি করে না। যেমন বারহাট্টা উপজেলায় পদ্মা ক্লিনিকের কথাই ধরা যাক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাকের ডগায় থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এত অভিযুক্ত থাকার পরেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।

বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে আর কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না। বারহাট্টায় কয়েকটি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা কিছু অস্ত্রোপচার কক্ষের অবস্থা দেখেছি খুবই নাজুক। অনেক জায়গায় মরিচা পড়া যন্ত্রপাতি দেখেছি। এসব ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন না করেই কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। আগে চিকিৎসা সেবার নামে অনেকে ব্যবসা করে এলেও আগামী দিনেও নিয়মনীতির বাইরে কেউ কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

জেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ সেলিম মিয়া জানান, এ বিষয়ে আমরা সোচ্চার রয়েছি, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তারা সহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তারা সবসময় মাঠে আছে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যদি কেউ করে তাদের অবৈধ কাগজ পত্র দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং হচ্ছে।

-বাবু/শোভা

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত