তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেও তার যে কালজয়ী সৃষ্টি, শুধু গান নয়, তিনি অনেক কালজয়ী চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন, তিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন। যতদিন বাংলা গান থাকবে, ততদিন গাজী মাজহারুল আনোয়ার বেঁচে থাকবেন।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে গীতিকবি সংঘ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে কিংবদন্তি গীতিকবি প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যু আমার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। তার মৃত্যুর আগে তিনি একটি বিষয় নিয়ে সচিবালয়ে এসেছিলেন আলাপ করতে। তারও পরে সুরকার আলম খানের স্মরণসভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন, আমিও ছিলাম। সাময়িকভাবে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে আমার জানা নেই। হঠাৎ তিনি চলে গেলেন।’
তিনি বলেন, ‘‘গাজী মাজহারুল আনোয়ার আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেও, তিনি যে সৃষ্টিগুলো করে গেছেন, ২০ হাজারের মতো গান। বিবিসি'র জরিপে সেরা ২০টি গানের মধ্যে তার তিনটি গান নির্বাচিত হয়েছে। এখনও যখন শুনি ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, সে গান আমাকে আনমনা করে দেয়। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার লেখা গান, আরও বেশ কয়েকটি গান লিখেছেন তিনি, যেগুলো তাকে অমরত্ব দিয়েছে। বাংলা গানের ইতিহাসে অনেক কালজয়ী গীতিকারের জন্ম হয়েছে। এতদিন যত কালজয়ী গীতিকারের জন্ম হয়েছে— তার মধ্যে অন্যতম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ভবিষ্যতেও তিনি তাই থাকবেন। তার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ আমার হয়নি। আমি গান গাই না, লিখিও না, আমি গানের খুব ভালো শ্রোতা। তাকে যতটুকু দেখেছি, তিনি আপাদমস্তক ভালো মানুষ ছিলেন। তার শুধু সৃষ্টির দিক আমরা আলোচনা করছি, তিনি যে এত ভালো একজন মানুষ ছিলেন, মিতভাষী ছিলেন, সেদিক আমরা আলোচনা করিনি। ’’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভারতবর্ষের অনেক জাতিসত্ত্বা আছে। তাদের মধ্যে অনন্য আমাদের গান-সংস্কৃতি। পুরো পৃথিবীতে যত জাতিসত্ত্বা আছে, তার মধ্যে বাঙালিরা অন্যতম। সেটার অন্যতম কারণ আমাদের উন্নত সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির অন্যতম দিক হচ্ছে বাংলা গান।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার (গাজী মাজহারুল আনোয়ার) সৃষ্টিগুলো যদি টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে সেগুলো সংগ্রহ করা প্রয়োজন। সংগ্রহ করার কাজটি তার পরিবার এবং বন্ধুদেরই করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। এফডিসিতে একটি সুন্দর নান্দনিক বিল্ডিং তৈরি হতে যাচ্ছে। যেখানে একটি চলচ্চিত্র সম্পূর্ণ প্রডাকশন হয়ে বেরিয়ে আসবে। সেখানে আমাদের অনেক জায়গা থাকবে। এক একটি ফ্লোর প্রায় ১১-১২ লাখ স্কয়ার ফুট। চলচ্চিত্র, সংগীত অঙ্গনে যারা কালজয়ী সৃষ্টি করে গেছেন, সেগুলো সেখানে সংরক্ষণ করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু সংগ্রহ করার কাজটি পরিবার এবং যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদেরকেই করতে হবে। এছাড়া আমাদের ফিল্ম আর্কাইভ ডিপার্টমেন্ট আছে সেখানেও রাখা যাবে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো গান গাওয়া হয়েছে, সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে। যেগুলো গাওয়া হয়নি— সেগুলোকে সুর দিয়ে আবার গাইতে হবে।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য ও দেশবরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান, প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্ত্রী জোহরা গাজী, গীতিকবি সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লিটন অধিকারী রিন্টু, বোন নাহিদা আক্তার নাসরিন,
মেয়ে দিঠি আনোয়ার, বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফেডারেশন (বিএমএফ)-এর সভাপতি গাজী আব্দুল হাকিম, গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, দেশ বরেণ্য সংগীত শিল্পী আবিদা সুলতানা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পী ও সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের উপদেষ্টা রফিকুল, সাধারণ সম্পাদক, গীতিকবি, সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটির সভাপতি গীতিকবি ও সুরকার নকিব খান, গীতিকবি সংঘের সহ সভাপতি গোলাম মোর্শেদ, সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী খান ও দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয় শাহরিয়ার প্রমুখ।
-বাবু/এসআর