আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র প্রতি নিয়োজিত থাকবে সাত জনের ফোর্স। ভোটের আগে-পরে থাকছেন পর্যাপ্ত সংখ্যা নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও নিয়োজিত থাকছে কয়েক প্লাটুন বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র্যাব-এর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশের অস্ত্রসহ মোট তিনজন, আনসারের অস্ত্রসহ দুই জন ও অঙ্গীভূত আনসারের দুই জন; মোট সাত জন নিয়োগ করা হবে। ভোটগ্রহণের দিন, তার আগে এক দিন ও পরে এক দিন; মোট তিন দিন ভোটকেন্দ্রে ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব অনুসারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পুলিশ সুপার, ক্ষেত্রবিশেষ মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ফোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ
জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলার জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ১টি মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের ১টি করে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। তবে বাস্তব অবস্থা ও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা হ্রাস/বৃদ্ধি করা যাবে। ফোর্সের ন্যূনতম পক্ষে ১টি দল ভোটকেন্দ্রের আশে পাশের এলাকায় নিবিড় টহল দানের ব্যবস্থা করবে। যতদূর সম্ভব নারী ভোট কক্ষের জন্য নারী ও পুরুষ ভোট কক্ষের জন্য পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার নিয়োগ করতে হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২২ উপলক্ষে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ৬১টি জেলায় প্রতিটির জন্য একজন করে মোট ৬১ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ও আচরণ বিধি সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণের পূর্বের দুদিন ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দুদিন অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫ (পাঁচ) দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।
বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট
জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি-৮৬ এ বর্ণিত ক্ষমতাবলে ওই জেলা পরিষদসমূহের নির্বাচনী এলাকায় বিধি-৭২, ৭৪, ৭৫, ৭৬ ও বিধি-৭৭ এর উপ-বিধি (১) এবং বিধি-৭৮ এর অধীন নির্বাচনী অপরাধসমূহ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ধারা- ১৯০ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন বিচারার্থে আমলে নিয়ে বিচার সম্পন্ন করার জন্য ৬১ জেলার মধ্যে ১১টি জেলা যথা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার জন্য প্রতিটিতে ৪ জন করে মোট ৪৪ জন এবং অবশিষ্ট ৫০ জেলায় প্রতিটিতে একজন করে মোট ৫০ জনসহ সর্বমোট ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটকে ভোটগ্রহণের পূর্বের দুই দিন, ভোটগ্রহণের দিন থেকে মোট পাঁচ দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।
বিজিবি/কোস্ট গার্ড/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন
বিজিবি/কোস্ট গার্ড/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ১/২ টি প্লাটুন জেলা সদরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে; দ্বীপাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে কোস্ট গার্ড কোন কোন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। বিজিবি এবং কোস্ট গার্ড উভয়ে ফোর্স মোতায়েনের বিষয়টি সমন্বয় করবে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)
সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ প্রবেশ/নির্বাচনের জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো ব্যক্তি/বস্তুর যাতায়াত/চলাফেরা ইত্যাদি আইন অনুযায়ী রোধ করা; মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে; নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে; বিশেষ পরিস্থিতিতে রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাকে সহায়তা করবে; রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।
পুলিশ
ভোটদানের জন্য ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সে জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহ কর্তৃক নিবিড় টহল দানের ব্যবস্থা করা; নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রধান কাজ। এছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সরঞ্জাম ও দলিল দস্তাবেজ আনা নেওয়ার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নির্বাচন কার্যালয়সমূহ, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধান করা; স্থানীয় জননিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারগণের সুশৃঙ্খল লাইন করানোসহ স্থানীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা; ভোটারদের জন্য আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ।
আনসার ও ভিডিপি
পুলিশ বাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তর নির্ধারণ করবে; স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় পূর্বক আবাসন ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে হবে; স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তর তাদের রেশন নির্ধারণ করবে।
আগামী ১৭ অক্টোবর সারাদেশে ৬১টি জেলা পরিষদ (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৫৯ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ১৪ হাজার ৯২৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৩৬ জন।
নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ৪৬৩টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ১৭২টি। আর চেয়ারম্যান পদ রয়েছে ৬১টি। এসব নির্বাচনে ৪৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯৫৫টি ভোট কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে রয়েছেন ৬২২ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৬৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
-বাবু/এ.এস