গত কয়েকদিন ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা পূর্ব পাড়ের চিতুলিয়া পাড়া এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। চোখের সামনেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শতাধিক বসতভিটা। যমুনার এমন ভাঙনে দিশেহারা পুরো এলাকাবাসী। হুমকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী চিতুলিয়া পাড়া, ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া গ্রাম, নদী রক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহারের উচুঁ সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা। গত কয়েক বছরের ভাঙনে যমুনা পূর্ব পাড়ের এলাকার শত শত পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি ও ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙ্গররোধে শীঘ্রই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে চলতি বছরে বন্যার পানি বৃদ্ধির প্রথম ধাপে তীব্র ভাঙনে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙ্গন রোধ হয়নি। চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে কিছু প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে স্থানীয়রা। পানি কমে গেলে নদী ভাঙন কিছুটা কমে আসে। সে সময় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানায় এলাকাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই সময় ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও গত কয়েকদিন ধরে ঐ এলাকায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় জিও ব্যাগ নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এরকম ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে নদী তীরবর্তী এই গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে চিরতরে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী চিতুলিয়া পাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ঘর-বাড়ি। তাদের সামনে ভেঙে যাচ্ছে এসব বসতভিটা। বুকফাঁটা আত্মনাত নিয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে পরিবারের লোকজন। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে এসব মানুষ। তাদের এই অসহায়ত্ব দেখার যেন কেউ নেই। এরমধ্যে অনেকে আবার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও গাছপালা কেটে অন্যত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারো কারো আসবাবপত্রসহ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, এবছর বর্ষা মৌসুমে আমার একটি ঘর নদীতে ভেঙে যায়। কিছুদিন আগে নদীপাড় থেকে ঘর সরিয়ে অন্য জায়গায় উঠিয়ে কোন রকমভাবে বসবাস করছিলাম। কিন্তু তার কয়েক দিন পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে। ভেবেছিলাম এখন আর ভাঙবে না, তাই আবার নদীপাড়ে ঘর উঠিয়ে বসবাস শুরু করি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। পরবর্তী ভাঙনে আমার বাকি দুইটি ঘরও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন আমি পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় থাকবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমার মতো আরো অনেকে ঘরবাড়িসহ বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। যদি সরকার আমাদের এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতো তাহলে আজকে আমার মতো শত শত পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হতো না।
চিতুলিয়া পাড়া গ্রামের মো. শাহজাহান বলেন, আমার চোখের সামনেই আমার ঘরবাড়িসহ বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিলনা। সব কিছু নদীতে ভেসে গেছে। এখনো প্রতিদিন অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে এবং এভাবে কয়েকদিন ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আমাদের এলাকায় অবহেলিত মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।
চিতুলিয়া গ্রামের এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, আমার বসতভিটা যা ছিল তা সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যমুনা নদীর ভাঙনে আমাদের কিছুই রইলো না। অনেক বছর থেকে শুনে আসছি এই নদীতে বাঁধ হবে। এখন তো আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে, আর বাঁধ দিয়ে কী হবে? গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার বলেন, গত কয়েকদিনে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন কবলিত মানুষ ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইতিমধ্যেই প্রায় তিনশত বসতভিটা ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। আরও শতাধিক পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলেছিল কিন্তু সেগুলো প্রায় নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। পরবর্তীতে ভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কিছু জিও ব্যাগ ফেললে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আগ পর্যন্ত রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইসরাত জাহান বলেন, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো যাতে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাত হোসেন বলেন, যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে আমার জানা ছিল না। লোক পাঠিয়ে দেখে ভাঙন এলাকায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাবু/জেএম