রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে বেঙ্গল কয়েল কারখানা নামে একটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েলের কালো ধোঁয়ার শ্বাসকষ্টে নারী-পুরুষসহ শিশুরা ছুটাছুটি করলে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে হারাগাছ পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের গফুরটারী মধ্যপাড়া গ্রামে অবস্থিত বেঙ্গল কয়েল কারখানার ভেতরে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
জানা গেছে, হারাগাছ পৌরসভার গফুরটারী এলাকার সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক মোস্তফা আল মাহমুদের বেঙ্গল সুপার ও বেঙ্গল কিং কয়েল কারখানায় আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাদের পানি ফুরিয়ে গেলে পাশের পুকুর থেকে পানি এনে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। অগ্নিকাণ্ডে কয়েল শুকানোর ডায়ার ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিলে আশপাশের বসতবাড়িতে থাকা মানুষদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় জোরপূর্বক আবাসিক এলাকার মধ্যে কয়েল কারখানাটি পরিচালনা করে আসছেন। কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের রেখে বাহিরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখে মালিকপক্ষ। কেউ চাইলেও ভেতরে প্রবেশের সুযোগ নেই। অগ্নিকাণ্ডের সময়ও কারখানার দরজা বন্ধ ছিল। পরে শ্রমিকরা চিৎকার শুরু করলে দরজা খোলা হয়। যেভাবে কারখানায় আগুন আর ধোঁয়া ওঠা শুরু করেছিল, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা যৌথভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে না করলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতো।
হারাগাছ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ইনচার্জ গোলজার হোসেন বলেন, আমরা দুপুর সোয়া ১টার দিকে বেঙ্গল কয়েল কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়েছি। সাত মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়। তিনি আরও বলেন, কারখানার আশপাশে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে খানবাড়ির পুকুর থেকে পানি এনে আগুন নেভানো হয়। বেঙ্গল কয়েল কারখানার আশপাশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি কারখানা থেকে অনেকটা দূরে রাখতে হয়েছে। ওই কারখানার ভেতরে ডায়ার ঘরের মধ্যে আগুনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ কয়েল শুকানো হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে সেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৬ অক্টোবর) ওই কয়েল কারখানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় কারখানা মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া বিএসটিআইয়ের অভিযানেও কারখানায় উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে কয়েল উৎপাদন অব্যাহত রাখে মালিকপক্ষ।
বাবু/জেএম