খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আগামী ৭ নভেম্বর ২২ আনুষ্ঠানিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ৪২টি সেতু উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে।
গত শনিবার ২৯ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সেতু উদ্বোধনের বিষয় নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৪২ টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুটি হচ্ছে দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কের লোগাং সেতু। ১৪৩ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতুটি মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কে ধুরুং খালের ওপর নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এছাড়া ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দিঘীনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৭৯.০৫ মিটারের পুজগাং বাজার সেতু, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়কের ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের গোমতী সেতু, ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায় মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কে ৪৪.২ মিটার দৈর্ঘ্যের জুর্গাছড়ি সেতু, ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়কের রামগড়ের সোনাইপুল সেতু, ৪কোটি ৫৫লাখ টাকা করে ৬৯কোটি ১৫লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৩টি সেতু, দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কে ৪৪মিটার দৈর্ঘ্যের পাবলাখালী সেতু, একই সড়কে ৪৪মিটার দৈর্ঘ্যের বাঘাইছড়ি সেতু, ৪০মিটার দৈর্ঘ্যের বাবুরোপাড়া সেতু, খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ৩৭মিটার দৈর্ঘ্যের পেরাছড়া ব্রিজ, একই সড়কে ৩৭মিটার দৈর্ঘ্যের গাছবান ব্রিজ, ৩৭মিটার দৈর্ঘ্যের কুকিছড়া ব্রিজ, ৩৭মিটার দৈর্ঘ্যের কুরাদিয়াছড়া ব্রিজ, একই দৈর্ঘ্যের লতিবানছড়া ব্রিজ, একই দৈর্ঘ্যের হাটহাজারি-মাটিরাঙ্গা সড়কের খাগড়াপুর ব্রিজ, রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়কে ঠাকুরছড়া ব্রিজ, মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ির হাতিছড়া সেতু, জালিয়াপাড়া-মহালছড়ি সড়কের সিন্দুকছড়ি সেতু ও পঙ্খিমুড়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
আরও রয়েছে, ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কের দেওয়ানছড়া সেতু, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় বাঘাইহাট-মারিশ্যা সড়কের পতেঙ্গাছড়া সেতু, একই সড়কে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় নাকাপা সেতু, ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়কের জারুলছড়ি সেতু, ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা করে ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় নির্মিত ৩টি সেতু, মহালছড়ির চোংড়াছড়ি সেতু, একই সড়কে মুসলিমপাড়া ব্রিজ ও হেঁয়াকো-রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কে ৩১ মিটার দৈর্ঘ্যের পাতাছড়া সেতু। ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জালিয়াপাড়া-সিন্দুকছড়ি সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ধুমনীঘাট সেতু ও যৌথখামার সেতু। ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং সড়কে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বড়পেরা সেতু, ৩ কোটি ৮ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোটনালা ব্রিজ, ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় লক্ষীছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের মগাইছড়ি সেতু।
৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায় পানছড়ি সড়কে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের লোগাং বাজার সেতু, ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দীঘিনালার বুজ্যেনাল সেতু, ৪ কোটি ৯ লাখ টাকায় মগমারাছড়া সেতু, ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় খাগড়াছি-পানছড়ি সড়কের ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের পাকুজ্জাছড়ি ব্রিজ, ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় মানিকছড়ি সড়কে ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের দুল্লাতলী সেতু, ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয় পানছড়ি সড়কের ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ভাইবোনছড়া ব্রিজ ও কলাবাগান ব্রিজ। ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় নির্মিত মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ও তাইন্দং ২টি সেতু, ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের কৃষি গবেষণা সেতু ও ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দীঘিনালা সড়কের হাতিমারাছড়া সেতু।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে ৪২টি সেতুর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে তবে বেইলি ব্রীজের পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ সেতু নির্মাণের ফলে জেলাবাসির যোগাযোগ ব্যাবস্থা নিরাপদ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তরান্নিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে যানবাহন চালিয়েছি। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনাও আছে। অস্থায়ী সেতুর পাটাতনে ভেঙে গাড়ি আটকে যান চলাচর বিঘ্নিত হতো। যে কয়েকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, সেগুলোও স্থায়ী সেতুতে রুপান্তরিত হলো। এটি খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সড়ক পথে যথাসময়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
বাবু/জেএম