মেহেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত হওয়ায় সম্প্রতি অনেক চাষী চায়না কমলার চাষ শুরু করেছেন। অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও করছেন এই কমলার চাষ। কৃষি বিভাগও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে কমলা চাষীদের।
মেহেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় বছর চারেক আগ থেকে অনেকে আগ্রহী হয়ে এর চাষ শুরু করে। স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শিক্ষিত বেকার ছেলেরা চাকরির প্রত্যাশা ছেড়ে শুরু করেছেন চায়না কমলা চাষের। বিশেষ করে চায়না-৩ জাতের কমলার চাষ হচ্ছে বেশি। জেলায় ১১০ হেক্টর চায়না কমলা লেবুর বাগান রয়েছে। এখন ৮৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এই কমলা চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় অনেক ঝুঁকে পড়েছে কমলা চাষে।
গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী চঞ্চল জানান, বাড়ি থেকে পড়াশোনার খরচ নিতে হয়। অনেক সময় টাকা যোগাড় করতে বেশ কষ্ট হতো। এজন্য কিছু একটা করার চিন্তা থেকে কমলা চাষ শুরু করেন। ২০২০ সালে ফেসবুকে এক উদ্যোক্তার কমলা চাষ দেখে তার সাথে পরামর্শ করে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। বছর তিনেক আগে বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা যোগাড় করে কমলার চারা সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। গেল তিন বছরে ৩০ হাজার টাকা খরচ করেন। একশ’টি গাছের সবকটি গাছে কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কেজি কমলা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। পড়ালেখার পাশাপাশি এর চাষ অব্যাহত রাখবেন।
গাংনীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম জানান, অবসর সময় কাটানোর জন্য তিনি দুই বিঘা জমিতে কমলার চাষ শুরু করেন। বছর চারেক আগে চুয়াডাঙ্গার নিধিকুন্ডু নামের একজনের বাগান থেকে ২০০টি কমলার চারা এনে পেয়ারা গাছের ফাঁকে রোপন করেন। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এ বছর ১০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, কমলা চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও বেকার যুবকরা পরামর্শ নিচ্ছেন কমলা চাষের। বাসায় বসে না থেকে এবং পরিবারের বোঝা না হয়ে এই ফল চাষে আগ্রহী হতে পরামর্শ দেন। গাড়াডোবার কুঠি পাড়ার কলেজ ছাত্র আব্দুস সালাম জানান, তার সহপাঠী চঞ্চল ইতোমধ্যে এক বিঘা জমিতে কমলা চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তাকে দেখে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য তিনিও কমলা চাষ করবেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, অনেকেই আগ্রহী হয়ে চায়না জাতের কমলা চাষ করছেন। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বাগান করেছেন। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা থাকায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মেহেরপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় লেবু জাতীয় ফলের বাগান রয়েছে ১১০ হেক্টর। বেকার যুবকদের হতাশা না হয়ে বেকারত্ব দূর করতে চায়না কমলা চাষসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করে সাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেন।
বাবু/এসআর