কক্সবাজারের রামুতে প্রবাসীর জমি দখলে নিতে বসতভিটায় দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ উঠেছে রশিদনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মাছুম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রামু থানায় একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হলেও অজানা কারণে প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পায়নি বলে জানিয়েছেন প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন ও তার বোন সামিনা ইয়াসমিন।
সামিনা ইয়াসমিন জানান, বুধবার ২৩ নভেম্বর ভোর সাড়ে চারটার দিকে তাদের বসত ভিটায় ও টিনের বাউন্ডারিতে আগুন লাগিয়ে দেন আব্দুল খালেক মাছুম ও তার সহযোগীরা। ঘটনায় তাৎক্ষণিক সহযোগীতার জন্য ৯৯৯ এ কল করেন ইয়াসমিন। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়৷
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানান, যেই জমি দখলের জন্য বারবার চেষ্টা করতেছে তারা সেই জমির রায় আমাদের পক্ষে দিয়েছে আদালত। তারপরেও আইনের কোন তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের জমি নিজেদের দখলে নিতে দফায় দফায় হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালাচ্ছে তারা। প্রবাসীর বোন, এর আগে গত ১৪ অক্টোবর মধ্যরাতে আমাদের জমি দখলের জন্য ভিটায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল প্যানেল চেয়ারম্যান মাছুম ও তার সহযোগিরা।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কোন ব্যাবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো বিভিন্ন হামলা, হয়রানি, ভাঙ্গচুর ও জীবন নাশের হুমকি দিয়ে আসছে মাছুম। মাছুম তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, ভাংচুর ও জমি দখলে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী সামিনা ইয়াসমিন অভিযুক্তদের আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৩৩২/২১।
সামিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, তার ভাই গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় রশিদনর ইউনিয়নের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মাছুম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গিয়াসের জমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। জমি দখলের জন্য বিভিন্ন সময় নির্মাণাধীন ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালিয়েছে তারা। নির্মাণাধীন কাজের বাউন্ডারি ও ভিটায় আগুন দিয়েছে রাতের আধারে। এর আগেও গত ২২ আগস্ট ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্যানেল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মিলে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছিল। এঘটনায় ভুক্তভোগী সামিনা ইয়াসমিন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরীর আবেদন জমা দেন থানায়। অজ্ঞাত কারণে অভিযোগ তদন্ত না করে বারবার থানায় বসে সমাধান করার তাগিদ রামু থানার ওসি তদন্ত। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট থানায় উভয়পক্ষের বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়।
রামু রশিদনগর পানিরছড়া বাজারের নৈশপ্রহরী জানান, গতমাসেও রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা বোরকা পড়ে অস্ত্র নিয়ে আগুন লাগিয়েছিলো। গতকাল ভোরেও কে বা কারা এসে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে তাদেরকে চেনা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে রামু থানার এস আই শাহাদাৎ জানান, ভোর রাতে আগুন দেয়ায় ঘটনাস্থলে কোন প্রত্যক্ষদর্শীকে পায়নি। তবে আগুনে পুড়া কিছু টিন ও ছাই দেখতে পেয়েছি। কারা আগুন দিয়েছে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে রামু থানার ওসি জানান, প্রবাসী উদ্দিনের জমিসংক্রান্ত বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে দুই পক্ষ আমাদের কাছে কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে। তবে সর্বশেষ অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটেছে খাস জমি ও সড়ক বিভাগের জমি দখলের বিষয়কে কেন্দ্র করে। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য আমাদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব বলে জানান তিনি।
বাবু/জেএম