রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫
ঘূর্ণিঝড় মানদৌসে ভারতে নিহত ৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬:৪৮ PM

ঘূর্ণিঝড় মানদৌসের দাপটে ভারতে এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আভাস পাওয়া গেছে।

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত ২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মানদৌস আছড়ে পড়ে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে। সেসময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার।

শুক্রবার এই ঝড় পৌঁছায় মহাবালিপুরমের কাছে। পরে শনিবার ভোরের দিকে এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ‘ঘূর্ণিঝড় মানদৌস দুর্বল হয়ে তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকায় প্রবল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ক্রমশ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অতিবাহিত হয়ে যাবে। এর ফলে আরো শক্তি হারাবে।’

শুক্রবার মধ্যরাত মামাল্লাপুরামে এই ঝড় আছড়ে পড়ে এবং সেই থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। মোট ১৩ টি জেলাতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চেন্নাইয়ের উপকণ্ঠে কাতুপাক্কাম শহরে সর্বাধিক ১৬ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে চেন্নাই, মাদুরানথাকাম, ইস্ট কোস্ট রোড, ওল্ড মহাবালিপুরামসহ একাধিক জায়গায় উপড়ে পড়েছে বহু গাছ। চেন্নাইয়ের এগমোর এলাকায় একটি বিশাল আকারের গাছ স্থানীয় একটি পেট্রল পাম্পের ছাদে পড়ায় ওই পাম্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া একাধিক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

সেইসঙ্গে একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে সমস্যাও বাড়ছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে মোটর পাম্প ব্যবহার করে ওই জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চেন্নাই ও কুড্ডালোরসহ ১৬টি জেলার স্কুল ও কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও স্থগিত রাখা হয়েছে। সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে সরকারি বাস পরিষেবা।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে ১৩টি দেশীয় ও তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। মহাবলীপুরমের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় থাকা দোকানগুলোর অস্থায়ী ছাদ ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়ে অন্য জায়গায় পড়েছে। একাধিক মাছ ধরার ট্রলার, বোটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফর্মার। ফলে রাজ্যটির অন্তত ৬০০টি জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এরপর বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নামার ফলে প্রায় তিন শতাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনরায় চালু হয়েছে। 

নিরাপত্তা, ত্রাণ, উদ্ধারকাজের তদারকিতে তামিলনাড়ুতে ১৬ হাজার পুলিশ সদস্য এবং দেড় হাজার হোমগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া চল্লিশ সদস্যের তামিলনাড়ু দুর্যোগ মোকাবিলা দল এবং ১২টি জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় শক্তি না হারানো পর্যন্ত গ্রেটার চেন্নাই কর্পোরেশনের তরফে সমস্ত মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে বারণ করেছে।

শনিবার সকালের দিকেই চেন্নাইয়ের কাসিমেদু এলাকায় ঘূর্ণিঝড় কবলিত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিলি করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে স্ট্যালিন। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। 

পরে গণমাধ্যমের কর্মীদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কারণে প্রায় ৪০০টি গাছ উপড়ে পড়েছে। গোটা চেন্নাইয়ে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড়ে এখনো পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় প্রবল বর্ষণের ফলে চারজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ৯৮টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ১৫১ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে অন্ধ্রপ্রদেশেও। শুক্রবার রাত থেকে রাজ্যটির দক্ষিণ উপকূলবর্তী ও রায়ালশীমা জেলাগুলোতে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তিরুপতি জেলার নাইডুপেতা এলাকায় সর্বাধিক ২৮১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘রাজ্য সরকারের তরফে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এড়ানো গেছে।’

ঘূর্ণিঝড় ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন। নেল্লোর, তিরুপতি, চিতর আন্নামায়া জেলার কালেক্টরদের সতর্ক থাকতে বলা বলেছেন এবং প্রয়োজনে ত্রাণ শিবির খোলার নির্দেশ দিয়েছেন।

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত