তিনি আমাদের জাতির গর্ব।এখানে এসে আমি হতাশ কারণ একজন বীর শ্রেষ্ঠের সমাধীস্থল যেমন থাকার কথা তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি দেখতে আসা ভৈরব উদয়ন স্কুলের পরিচালক মতিউর রহমান সাগর হতাশা প্রকাশ করে বলেন,আমি আমার স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এসেছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের সমাধি দেখতে। আমার কাছে মনে হচ্ছে যথাযথ মর্যাদায় সমাধীস্থলটি রক্ষিত নেই। এখানে অবাধ যাতায়াত রয়েছে গবাদিপশুর এবং আশেপাশের লোকজন এ জায়গাটির অপব্যবহার করছে। এই সমাধিস্থলটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালের সমাধি ঘিরে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি।
বিজয়ের মাস আসলেই ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাতায়ত বাড়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের তারপর সারা বছর আর কোন খবর থাকে না।
আশপাশের মানুষ নানাভাবে সমাধির পরিবেশকে নষ্ট করছে।অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের এই সমাধিস্থলটি।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর আখাউড়া প্রতিরক্ষা অবস্থানে হানাদারবাহিনী শক্তিশালী আক্রমণ চালায়। এ সময় লাগাতার ২ দিন আখাউড়ার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। দরুইন গ্রামে ইপিআরের একটি কোম্পানি অবস্থান নেয়।
তবে হানাদাররা যাতে সামনের দিক অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য একটি ব্রিজ ভেঙে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু পাকবাহিনী গঙ্গাসাগর এলাকা থেকে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে দরুইন গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলে।
এ সময় দরুইন গ্রামে বাঙ্কার খুঁড়ে মোস্তফা কামাল ও তার সহযোদ্ধারা প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলে । ১৭ ও ১৮ এপ্রিল সেখানে লাগাতার যুদ্ধ হয়। টানা ২ দিন মোস্তফা কামাল কাভারিং ফায়ার দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে তার সহযোগীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে সুযোগ করে দেন। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামাল ১৮ এপ্রিল বাঙ্কারেই শহীদ হন। এর ঠিক পাশেই একটি পুকুর পাড়ে তাকে সমাহিত করা হয়।
সমাধিস্থল পরিদর্শনে আসা শিক্ষার্থী প্রাদিতা মেহনাজ নীধি জানান, বই পত্রে অনেক পড়েছি এই জায়গায় কথা। এখানে এসে আমি আনন্দিত এবং গর্ববোধ করছি যে বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি নিজ চোখে দেখতে পারছি। কিন্তু একটি বিষয় আমার খুব কষ্ট লেগেছে আমার কাছে মনে হচ্ছে এই জায়গাটি ঠিক মত সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বা যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। এমন একজন বীরশ্রেষ্ঠ যিনি আমাদের রাষ্টের একটি সম্পদ। তার সামধিটি যদি এভাবে অরক্ষিত থাকে সেইটি আসলে কষ্টদায়ক।
মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ মতিন বলেন, সমাধির চারপাশে দেয়াল নিমার্ণ ও রেললাইন থেকে সমাধিস্থল পর্যন্ত যাওয়ার সড়কটি পাকাকরণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন,আখাউড়া মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ কিছু নির্দশন রয়েছে।তার মাঝে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তাফা কামালের সমাধি। সমাধীস্থলে বর্তমান যে অবস্থা রয়েছে, তা আরো উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। সমাধীস্থলের উন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব। সমাধীস্থলে যাতায়াতের রাস্তাটির বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বর্তামান রেলওয়ের উন্নয়ন কাজ চলছে সেইটাকে কেন্দ্র করে সমাধিস্থলে যাওয়ার যে রাস্তাটি তা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। রেলওয়ের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে রেলওয়ে এবং এলজিইডির যৌথ উদ্যোগে রাস্তার সমস্যাটি সমাধান করা হবে।
-বাবু/এ.এস